
১০২ জ্বর আসছে
Reading Time: 33 minutesকবি এবং কথা সাহিত্যিক স্নিগ্ধা বাউলের ১০২ জ্বর আসছে; খুব চিন্তায় পড়ে গেছে বোকা! নানান চিন্তা- জ্বরের, ঘোরের আর মাদকতার আবেশের।
কোনটায় যে কাবু হয় বোকা! বোকা কাবু হয়- সহজিয়া শব্দের বুননে, সহজ করে বলা গল্পে দেখে ফেলা দারুণ জীবনে।
স্নিগ্ধা বাউলের ১০২ জ্বর আসছে ঠিক তেমনই রচনা। বো-কাপা-ঠকদের নিমিত্তে ১০২ জ্বর আসছে প্রকাশ করা হলো।
-বোকা
১০২ জ্বর আসছে
১। ১০২ জ্বর আসছে
মাছরাঙার মতো বসে থাকতে থাকতে নীল আকাশটা রৌদ্রের সাথে দৌড়ে কেমন আসমানী হয়ে গেছে; ঝকঝকে জলের ভিতর জানছিনা কার মুখ ভাসে শিকারের প্রত্যাশী হৃদয়ে- জানছিই না আমি আজ ছুটি। দিনটা ধরে হেঁটে যাওয়া দেখছি রাস্তার পিচ আর ইউকিলিপটাসের বাকলখসা।
এমন ছুটিরদিনে সকালে বাবা মাছ কিনতেন, পুঁটি থেকে টেঙরা আর গুতুম মাছ। মাছ কাটতে গিয়ে তখন জানতাম না টেঙরা বড় হয়ে আমাদের মতো সুস্বাদু আইড় মাছ হয়ে যায়! লাকড়িজ্বলা চুলার কাছে বসিয়ে মা যখন ঘর লেপতেন, আমি কেবল লাকড়িগুলো ঠেলে দিতাম চুলার ভিতরে, জ্বলতে জ্বলতে গাছের ডালগুলোতে যে লাল আগুন পরিস্ফুট হতো তার নীল শিখাটা হাত বাড়িয়ে ছুঁইতে চাইতাম আনমনে। মন কেমন করা রোদ না উঠলেও মেঘের বাড়িতে ছুটে যেতাম।
টেঙরামাছের কাঁটায় তখন হাতের আঙুলগুলো খেলা করে, এখন যেমন করে অজানা হাতের উৎপাত শরীরের কাঁটায়। লাল শাড়িপরা পুঁটিমাছের ইতিহাস আমার আর এ জীবনে জানা হয়নি, নিশ্চয়ই কোনো জেলেও জানতোনা একটা লালবৌ আটকে গেছে জালের কোণায়। হিজলতলী যে পুষ্কনিটা ছিলো তার কাছেই আসতো অনেকগুলো কানকো মাছ, হাতের কোশায় তাদের ধরতে গেলেই আমরা নামতে নামতে যতগুলো সিঁড়ি নেমে যেতাম এরপরই ভয় হতো গলাকাটা মাছগুলো যদি ফিরে আসে!
শরতে তোমরা কাশফুল দেখো- আমরা দেখতাম বন্যাফুলের ঢোল পাঁপড়ি, হঠাৎই মেঘ গর্জে উঠলে মা হাসতেন, বলেতেন শিব ঠাকুর ধমকাচ্ছেন দুর্গা মাকে- এবারও আসতে দিতে চাননা বাপের বাড়ি! মার সাথে আমরাও তখন বলতাম দুগগা দুগগা! অথচ মা দুগগার অসহায় চোখ এড়িয়ে গেছে আমার মায়ের দুঃখের ক্যটাগরিতে।
বসে আছি ম-ম চারদিক এখন, ড্রয়িং জুড়ে সাদা দেয়ালে ছবি, টেবিলে মানিপ্ল্যান্ট কয়েকটা আয়নায় ঘুরে ফিরে নিজেরে দেখতে হবে এমন। একটা আয়নায় ভাসছে তীক্ষ্ণ বাঁশের কঞ্চিতে নীলকণ্ঠ স্বরগ্রামের মাছরাঙা মাছটি- যেন সব ছাপিয়ে জ্যাঠা ডাকছেন দুপুরের নিস্তব্ধতার আনন্দ হয়ে- একবাটি তরকারি নিয়ে আমি এখনই দৌড়ে যাবো জেঠিমার কাছে- নতুন মুলায় রান্না করা পুঁটি মাছের ঝোল!
সম্পর্কগুলো আদতে প্রয়োজনেই গড়ে ভাঙে, তীব্র হেলোসিনেসনে কেবল দেখা দেয় আত্মার অবরূপ যেমন করে আমি দেখি আমার শৈশব!
২। ১০২ জ্বর আসছে
সম্ভবত মৃত্যু আমার কাছে নিঃশব্দ চৈতন্য, বেদনারহিত জীবনবোধ কিংবা দূরের যাত্রার সবচেয়ে সুন্দরতম আমন্ত্রণগাথা স্থবিরতা। জীর্ণ মাকড়সার জালের মতো নিজের গোপন যে জীবন, তারে প্রলম্বিত করতে করতে এগিয়ে যাওয়া দেখছি আমরা যারা তাদের কাছে সহজাত ঔদার্যবোধ নমনীয়তায় সঞ্চালিত সম্পর্কই সম্ভবত মৃত্যু।
বহুদিন একা ঘরের সিলিং পর্দার আড়ালে সূর্য ডুবে যায় দেখেছি আমি, একটানা ঘড়ির কাঁটার বর্ম ঢালস্বরূপ আটকে দিয়ে জানতে চাইছিলাম আমার অনিবার্য প্রাসঙ্গিকতায় জীবনের গল্প। উচ্চারিত বক্তব্যের ফাঁকে সুকৌশলে এসে পড়ে আলোর ঠুমরি ধাধারা তাল কিংবা ভোরের রহস্যময় সারগম।
জীবন তবে কী! প্রত্যহ প্রতিভাত আলো না প্রতিদিন প্রতিটি মানুষের অবাধ্য কর্পূরের মতো নিঃসৃত শক্তিশ্বাস! পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুলটি ভালোবেসে খুঁজে পাওয়া সম্ভব যে প্রতিভাত সম্ভাবনা তার পরিণতি যদি ঝরে পড়া হয় তবে জীবন তো মৃত্যুর পথে লাগামহীন বল্গাহরিণ- ছুটছে সুন্দরীগুল্ম বরাবর লবণাক্ত ম্যানগ্রোভ হয়ে অনন্ত মহানভে অভিসারে!
আমরা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছি হারানোর মতো খেলায়; এগেইন এন্ড এগেইন!
৩। ১০২ জ্বর আসছে
এমন তিরতির বৃষ্টিতে মায়ের সেই মুখটা মনে হয়, ভেজা লাকড়ির জন্য যে মুখ শুকিয়ে গেছে তার। আমাদের লাকড়িজ্বলা চুলায় মা টগবগিয়ে তাকিয়ে থাকতেন। স্কুল ছুটির ফাঁকে ফাঁকে আমি আর মেজদি মায়ের সাথে লাকড়ি জমাতাম আর বস্তায় ভরে রাখতাম মায়ের দুর্দিনের পুঁজি করে।
তারপর এমন তিরতির বৃষ্টি হলে মা টেনে আনতেন শুকনা পাতা আর খটখটে কাঠের টুকরো। আলকাতরা মিশানো পাতলা ফিনফিনে লোহার শিক দিয়ে আমরা মাকে আধভেজা চুলার পাশে জ্বলতে দেখেছি! কেবল ইশারায় যদি বৃষ্টিতে নেমে আসতাম তবে এক টুকরা কাঠ নির্ঘাত পিঠ বরাবর বরাদ্দ ছিলো আমাদের। ছুঁড়ে আসা কাঠের টুকরা লক্ষ্যভেদ করতে না পারলেও কোনোদিন চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যেতাম বাইরে, ভেজা শাড়িটা শুকিয়ে মা তখন সবে হয়তো চোখ পেতে দিয়েছেন বিছানার চাটাইয়ে।এরপর ভর সন্ধ্যায় ফিরে আসা তার আঁচলের কাছে। কাদা মাটির সব আবার পরিস্কার করে পড়তে বসিয়ে মা আবার জ্বালাতেন চুলার আগুন। গরম সেই ভাতের ভাঁপটা এখনো টের পাই আঁচলের ভাঁজে!
জীবনের ছোট ছোট রেখাগুলি এক একটা স্লামডগ মিলিয়নিয়ার এর মতো। আমাদের পুব-কিনারার ঘরের পাশে যে কাঁচমিঠা আমের গাছটা ছিলো তার পাশে বেতের শলাকার জানালাটা আমরা দুইবোন খোপ দিয়ে ঝাপের মতো খুলে দিতাম।ঝাপের আলোয় তখন ঝকঝকিয়ে উঠতো আমাদের পড়ার টেবিল; দুপুরের পর সূর্য হেলে পড়ার আগে স্পষ্ট হয়ে যেতো দাদার বেতের আধভাঙা বুকশেলফটি। সেখান থেকে শুরু কবিতারা চলে আসার রাজ্যে।প্রায়ই আমরা দাদার বইগুলো পরিস্কার করে আবার গুছিয়ে রাখতাম, যে জলে আগুন জ্বলে, রক্তমাংস, ঢাকার ইতিহাস,নরসিংদীর শহীদ বুদ্ধিজীবী, আরও বইয়ের পাতা। চট করে আবিষ্কার করি নিজের স্মৃতি।
এই ঘরটায় মাটির মেঝেতে আমরা সারি করে বসে যেতাম রাতের খাবারে, মা পদ্মফুলের মণি হয়ে বাড়তেন মুক্তার মতো সাদা ভাত, আলু ভর্তার মুঠি আর গরম ডাল। আহ স্মৃতি নিয়ে যায় আমারে- তেপান্তরের বিস্তৃত খোলা মাঠে।
স্মৃতিরা প্রকট হলে
দরজার ছিটকিনি খুলে
পোয়াতি বিড়ালের মতো
খামছে ধরে সময়;
শেষ পাতাটি এখনও ঝুলছে
ঘন নিঃশব্দে কাঁদছে হিজল
শিশির এলে ঝরে পড়তো
দুঃসময়ের মরা ঘাসে।
৪। ১০২ জ্বর আসছে
নাড়ুর মৌ মৌ গন্ধটা তোলপাড় করছে সকাল থেকে, ঠাম্মার পুরাতন কাঠের আলমিরার বৈয়াম ভাঙা এই গন্ধ। তার হাতের চামড়ার বয়স যখন শতাধিক আমার দশ বছরের হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে দেখেছি। পুরাতন আলমিরার মতো ঝাঁঝালো কুঁচকে আসা সেখানে জমা হয় বহুকালের বলিষ্ঠতা। মজা গুঁড়ের পাওনা ঘ্রাণে আমরা বারবার তাকাতাম কাঠের থাম ধরে, সাহসী চোখে সেখান থেকে উঠে এসেছে কয়েক জোড়া তেলাপোকার দম্পতি।
ঠাম্মা গল্প করতেন তার কৈশোরের। যখন বিয়ের হলো বয়স তখন সাত অথবা আট। শাড়ি পেঁচিয়ে তিনি উঠতেন গাছে। বরকে ভাবতেন মাস্টার! কাছে এলেই চিৎকার করতেন। এরপর আরও কত কত গল্প নিজে মনে করে করে হাসতেন! আমরা বলতাম ঠামমা কও না এরপর!
বুড়ি তখন ঘুমিয়ে!
বহুদিন ধরে এমন গল্পগুলো জিইয়ে রাখার কৌটায় জমানো মনিহারি চিঠির খামে আমাদের এইসব দিনগুলো এখন। জিভের ধার করা জলে এখন ভেসে আসে জেঠিমার পুরাতন আচারের বৈয়াম। রোদের বিপরীতে তেল চিটচিটে আমের খোসাগুলো তাকিয়ে থাকে দুপুরের কাছাকাছি সময়ে।
এইক্ষেত্রে যখন মনে হলো মাটিরদরে খাদ্য সংগ্রহের জন্য একটা কাজ আমি করছি, তখন জিভটা লকলকিয়ে খলখল করে হাসে। মরিচ গুঁড়া থেকে আমলকি জলপাই কিংবা বিস্কিটের গুড়া আরাধ্য জ্যাম জ্যালি টেবিলের পাটাতনে বিছানো রয়েছে মলিন মেঘ হয়ে। ফলের ঝুড়িটা মাছির মতো কয়েকটা চোখ পিটপিটিয়ে চাইলো, বিস্বাদে ভেসে আসে তেঁতো মুখের আদল।
কাঁচা গাবের বিচির স্বাদটা এসে লাগে, ঝিরিঝিরি তেঁতুল পাতার স্বাদ অথবা চিবিয়ে খাওয়া তেলাকোচার রস। কালোমেঘের পাতার দম আটকানো বিরাট একটা স্বাদও পাই। জাম গাছটা যার বেশিরভাগই বুলবুলির খাদ্য ছিল- ইশ যদি বুলবুলি হইতাম!
কেবল মনে হয়, আবার যদি পেতাম বেলপুড়ানো মাটির চুলার স্বাদ, লাটিম ঘুরায় দেখা বিলাতি গাবের লাট্টু, পোড়া মাটির আঙরা, কদবেলের কাঠি আরও আরও অনেক যারা জ্যামজেলির কাছে হেরেছে বলে মনে করতে পারি না তাদের নাম!
৫। ১০২ জ্বর আসছে
বিশুদ্ধ বেদনার অসম্ভব শব্দহীনতার নাম নির্জনতা, জেঁকে বসা ঘুঘুর একটানা দুপুরীয় আর্তনাদের নাম ক্লান্তি। হঠাৎই দুপুর গড়িয়ে হাসতে ইচ্ছে করলে একবাটি আমড়া মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। সন্ধ্যার বর্ণিল বৃষ্টি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি নিজের মতো কাঁদছে বেকায়দার আকাশটা। শব্দহীন অনুভূতি হয়েছিল যে দিনগুলোতে সেখানে জমা হয় বেদনার অব্যক্ত বর্ণমালায় কতগুলো তানপুরার তার। বহুদিন বিসমিল্লাহ খাঁ সাহেবের সুরটিই যেন টানছে মাক্কুর একটা পাশ ধরে। তুলার ধুনরি যেন টানছে আর বইছে শব্দের তোলপাড়।
বারান্দার গাছগুলোতে জল দিতেই শীত লাগলে অনুবাদ করি নিজের উত্তাপ, ম্যানথলের ভিতর দিয়ে চলে যায় যে ঠাণ্ডা আবহ প্রতিদিন তারে জমা করতে করতেই জলের ভেতর থেকে উঠে আসে পৌরাণিক প্রলেপ। ওফ,,শব্দ যেন ঘ্রাণ জীবন পরিত্রাণ। শব্দ ধার দিতে চায় পুরাতন প্রেমিক অথচ তার শব্দহীনতা উড়নচণ্ডীর মতো কর্পূর হয়ে গেছে। আরও শব্দ শুনতে চাইতাম বাইরের তারে ঝুলন্ত কাকের লেজটায়, সেও নির্বাক উড়ে যায়, না রাখে রেশ কিংবা ছায়ার দৈর্ঘ্য।
শব্দ চাইতাম আমি, চুম্বন শরীর কিংবা আরও অনেক কিছু। এমন ভায়োলিনের শরীর নিয়ে জান্তার মতো খুঁজেছি ধাতব কাঠামোর শব্দ। উপচে পড়া জল, পুকুরের হিজল, গর্জন শঙ্খ কেউ দেয়নি আমায় শব্দের জগতটা।
পাহাড় ডিঙিয়ে নেমে এসেছে গ্যাসের স্টোভ, হাঁড়ির পুরাতন ভাতগুলো হঠাৎই রিনরিনিয়ে উঠে নিজেদের মধ্যে, আমি শব্দ পাই ফ্রিজের মধ্যে বসবাসরত টমেটোর লাল ঘায়ে, শুকনা বেগুনগুলো কটমটিয়ে বলে আগুন দাও,,ডিমের খোসায় লেগে থাকা মেঘের মতো ছোপধরা বিচ্ছিরি লাল দাগগুলো ওদের ভাষায় কথা বলে!
শব্দের তোলপাড় আমি টের পাই। পৃথিবী তো শব্দের ঘ্রাণে ম-ম করছে অক্ষরেখা বরাবর,,
৬। ১০২ জ্বর আসছে
এই যে রোদের কাফেলারা বাইরে ঝকমক করছে, অথচ মা বলছেন তুমুল বৃষ্টি। নিজেকে বন্দিদশার এমনতর দিনে ভাবছিলাম কোন সংখ্যাগুলো জীবনে গুরুতর। বনবাসকাল চৌদ্দ বছর, মহাভারতের যুদ্ধও মনে হয় এমন কাছাকাছি সংখ্যার!
রাতের ঘুম সকালে ভাঙছে অজস্র অশোকের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে, টিপকল থেকে ঝরছে যে বিন্দু বিন্দু জল তার শব্দেরা মাথার মগজ তিরিক্ষি না করে মনে হয় ডাকছে একটা ঘুঘু বিষণ্ণ কুয়াশা ভেদ করা আশ্বিনের দিকে। উঠে হাঁটতে শুরু করলেই পায়ের কাছে বসে একটা নির্মোহ অ্যাকাডেমিক ডিসকোর্সের কুৎসিত স্বর, যারে ছেড়েছি বহুদিন। এমন অথচ এই দিনগুলোতে রান্নাঘরে যারা নিজেদের নিয়ে যায় সারাদিন তাদের ঘামমিশ্রিত আমিষ ক্যালরির কৌটা যেন আমার মাথার কাছে কেউ রেখে গেছে।
সকালে চটি খুঁজে না পেলে যারে ডাকতাম তার নামটা মৃদু হয়ে বেরিয়ে যায় উত্তরের জানালা দিয়ে, চায়ের গরমজল কিংবা টেবিলের কাচ গলে যাওয়া মোমগুলো জ্বলতে থাকে সিংহাসনচ্যুত দেবতার মর্ত্যে। গতসন্ধ্যায় জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে আগরবাতির ঘ্রাণ, লালপাড়ের আঁচল আর নিষ্ঠা পক্ষপাতমুক্ত পরিত্রাণ।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি মানুষ ছুটছে, ভিতরে টের পাই আমি হয়তো মানুষ নই, অযথা এমন বসে আছি একটা বটগাছের মতো, অথবা আরও দূরের একটা নুইয়ে পড়া দেবদারু গাছটি হয়ে। আখরোট কিংবা বাদামের পাহাড়ি শহর থেকে যে রাস্তাটা ডাল লেইক বরাবর দাঁড়িয়ে আছে আমি যে সেই ঝিলম নদী।
হালকা বাতাসে ঘরে ফিরে আসি, এটাই হয়তো ঘর, ছায়া অবিরাম অন্তহীন পরাবর্ত বাস্তবতার ভিত্তি। নিজেকে আবিষ্কার করি বইয়ের পাতায় ভুল করে উঁকি দেয়া চরিত্র কাল্পনিক হিসেবে। চলতে শুরু করেই যে থেমে যায় লেখকের জটিল ধাঁধায়। বহুদিন এমন চরিত্র হতে চেয়েছিলাম, তারিখটি অবশ্য মনে নেই।
অমন করে দেওয়া হবে জীবনের ঘ্রাণ, জীবনের নেই অন্যকোনো নাম,,
৭। ১০২ জ্বর আসছে
গলার স্বরে দলা পাকানো চিৎকারটা বেরিয়ে আসতে চাইলেই সরিয়ে দিতে হয় বহুকাল আগের নিজেকে। পেরিয়ে আসা সময়েরাই জানে বিগতের হিসেব, নিজেকে অর্বাক করার এমন সম্মোহন আপাতত আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে। আমি প্রতি বিকেলে গত বিকেলের ঘরে ঢুকে যেতাম, ঠাণ্ডায় হাড় অবধি সেখানে স্পষ্ট, জলীয়বাষ্পের মতো ব্যবধানের ঝাপসা আয়নায় খেলা করে সয়ম্ভূ দৃষ্টি। প্রেক্ষাপটের ভিন্নতায় দুটো চোখ জ্বলে যায় না-দেখার ভান করে। সরিয়ে এনে আবার জমা রাখি মাটির ব্যাঙ্কে এমন সব দিনকাল যারা জমছে ঘামছে নিজেদের কাছাকাছি তৃষ্ণায়।
মনে হলো স্বপ্নের ভিতরে ঢুকে গেছে একটা বড় কাঠের নৌকা, ঘড়ঘড় আওয়াজের ভল্যুম কমিয়ে দিতে হবে এমন সময়ে সে ঘুম ভাঙছে। ঢেউগুলিও যেন আমাদের কাছে এসে হুমড়ি খেয়ে শেষ হয় ক্লান্ত ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে। অথচ সে স্বপ্ন আমার নয় যেটি দেখতে অগোচরে আমি রয়ে গেছি ঘুমের লোভে। আমার মনে হয় আমি যেন একটা নিকৃষ্ট গাছ, অক্সিটোসিন নিসৃত হচ্ছে ক্রমাগত, ভারী হচ্ছে চোখের জল, নীল অপরাজিতা লতিয়ে যাচ্ছে আমার পায়ের পাতার কাছে, লকলকে জিভ ছুঁয়েছিল তখন ফুলের ঘ্রাণ, আমি টেনে নিয়ে যাই তাকে নিজের জন্য। যেন পৃথিবীর আমি একমাত্র প্রতিভূ এখন রোদ গিলেছি হাসি দিয়ে।
কানের কাছে অজস্র মানুষের মতো কথা বলছে কতগুলো মাছ, তাদের মাত্রাজ্ঞান আমাকে জানতে হয় নাই। কেননা মাছের মতো কিলবিলিয়া আচমকা চোখে তারা জানতে চায় পাঠকের নিজস্ব মাত্রা। আমি সর্বোত্তম উপায় নেই বলে বসে থাকি, গতকাল অবধি ধূলির ইতিহাস থেকে রচনা করতে চাইতাম সাদা ধবধবে মৃতবাড়ির অমৃত কান্না।
টের পাই আমার খিদা লাগছে, ডিমের সাদা অংশটি এগিয়ে আসে আমার কাছে, থকথকে দলার মাংস নিয়ে তৈরি করা হবে আমার খাদ্যতালিকার সংযোজন। আমি গিলে ফেলতে চাই পৃথিবীর ইতিহাস, আমার লালায় জন্মানো লোভের চকচকে নিখুঁত প্রাণশক্তির বিন্যাস,,,
৮। ১০২ জ্বর আসছে
ঠিক একবছর আগে এমন একটা দিনে বহুস্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়েছিলাম। আমার জ্বরের ঘোর আদতে সেখানে লেগে আছে। সেখানে সকাল হয় চারঘণ্টা পর। হালকা ঠাণ্ডা লাগতেই মনে হলো বাইরে নিশ্চয়ই কোথাও শিউলি ফুল ফুটে আছে! আমাকে অবাক করে দিয়ে জানালার সামনে দিয়ে দৌড়ে চলে যায় ছোট ছোট বাচ্চাগুলো। মা’কে ফোন করতেই মনে হলো আমি তো ঢাকায় রয়ে গেলাম।
অথচ ঢাকা ছেড়েছি প্রায় আটচল্লিশ ঘণ্টা। বিমানের পাখনায় সূর্যোদয় লেগে থাকার ভোরটায় আমার মনে হচ্ছিল পৃথিবীর রঙ আদতে নাটা ফলের গায়ে মাছির মতো লেগে আছে। হরেক রকমের বিন্যাসের পর কাতার বিমানবন্দরে আমার নিজেকে অচেনা লাগতে শুরু করে। শহরের শেষ ট্রেন স্টেশনে নামবো বলে এতদিন যে স্বপ্ন ছিল তার মধ্যরাতে পৌঁছে যায় আমার গন্তব্য।
সকাল সকাল কফি খেতে খেতে ভাবছিলাম নিশ্চয়ই নরসিংদী শহরে উঠে গেছে লাল সূর্য। সেখানে নয় ডিগ্রি তাপমাত্রায় হালকা বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করেছে আমার মতো আগন্তুক কিছু গাছ। এডমিশনের কাজ শেষ করে যখন বাসায় ফিরলাম, ঢাকার সবাই অবশ্য ফিরছে অফিস থেকে বাড়ি। অসম্ভব ব্যবধানের পরও আমরা একটাই পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি! কত দ্রূত সরে যায় পৃথিবীর ভাষা আমরা জানি না। স্মৃতির আঁচর খামছে ধরে আমাকে বিভ্রম করছি আমি আমারই সাথে। আমি জানছিলাম আমাকে পালাতে হবে; আমার গন্তব্য অথচ ঠিকানা জানতাম না আমি জুতাগুলোর মাপে।
মানুষ মূলত জানতে চায় না পারস্পরিক বেদনা। আমার জ্বর আমাকে বলে দিচ্ছে দুপুর থেকে সন্ধ্যার বাইরে তোমার সেমিজ বদল করে নিও। ঘোরলাগা আলোর বিপরীত প্রান্ত আমাকে রাশিয়ান উপত্যকার এক পার্কে নিয়ে ছেড়ে দিল একা। বাতাসে পাতারা ঝরছে একটা নদীকে কেন্দ্র করে আর অনেক ধূসর রঙের মানুষ যারা জানে না আমাকে কিংবা আমার নাম তারা কী উপলদ্ধি করবে যে আমার শীত লাগছিল!
টিজা নদীর মোহনায় বাঁক কেটে গেলে আমি ম্যাপলের কাছে ঘ্রাণ নিতে যাই অথচ এখন আমার বারান্দা ভরে গেলো সাদা নীল অপরাজিতার লতায়!
৯। ১০২ জ্বর আসছে
ঘুম ভাঙছে না আমার জ্বর ভাঙছে ঠিক ঠাওর করতে পারছি না। বিছানায় নেমে এসেছে জল কিংবা ঘাম যেন সারারাত আমি অংক পরীক্ষা দিতে গেলাম জানালার গ্রিলের কাছে। আচমকাই স্মৃতি দাঁড়িয়ে আছে সেগেট শহরের গলিতে আঁকা কাল্পনিক অস্তিত্ব হয়ে, যেন একটা পাতা পড়ে গেলে শব্দ থেকে শুরু হবে আমাদের জীবন। আমি শুনতে পাচ্ছি ধূসর ধূপগন্ধী গাঢ় অন্ধকার ভোর হচ্ছে এক ক্রমাগত স্রোতের সাথে কথা বলে। সিলিং ফ্যান ঝুলানো আয়না আর কাঠ মালতীর রঙের পর্দায় ঝুলছে বাতাসটা। আমাদের কয়েকটি জন্ম রোদ গিলতে শিখছি সংগ্রহ করতে জানছি একাকীত্বের বেদনা। আমার হাতের আঙুলগুলো মাত্রা নির্ণয় করতে জানে, গুণিতক হিসেবে করতে জানে।তবে জীবন তো হাতের আঙুলের কাছে জানাজানি। কেথায় তবে মায়া! কোথায় সে যারে দেখা যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না জরুরি মনে করে। কল্পনার ভাষা নেই কেবল ছবি, আমি জানছি আমার জ্বর। অনেক জ্বর থাকে মাথার ভিতর যন্ত্রণা হয়ে। আচমকা সে যে জীবন আমার কাছে এসে বলে আমার বিছানা ভেসে গেছে অভিমানে আর অবহেলায়। কোথায় কেও ভাবছে না আমার অভিযোগ নিয়ে। নিজেকে জানাই নিশ্চয়ই নরসিংদী শহরটা যখন আমি জন্মেছি সেখানেই ফিরে আসে ঘুম অথচ নরসিংদী শহরটায় নিশ্চয়ই পূজার আমেজ শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিন ঘাটে জল নিতে আসছে ভোরের পূজারী। নিশ্চয়ই দুপুরের রোদে ঘেমে উঠলো শাড়ির দোকানগুলোর দরজা।একটানা বেজে চলেছে নিশ্চিত টুংটাং ধ্বনি।
এসময়ে উত্তরে বাতাস শুরু হয়। উঠানে পাতার মতো মায়ের গল্পগুলো মনে হয়। একই গল্প মা প্রতিবছর করতেন ; কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসার কথা। উত্তর পূর্ব কোণের আকাশে ঝুলে থাকা সাদা মেঘের ফুলেরা নিশ্চয়ই আমার মতো বয়সী হয়ে উঠেনি।
স্কুল ছুটির পর দাঁড়িয়ে দেখতাম মণ্ডপসজ্জা, সময় পেরিয়ে এসে পড়ে মায়ের আঁচল। শুরুর দিনগুলোতে আয়োজন করে দেওয়া এই সময়গুলো গোপন করে আছে কোনো অলিন্দে।
ঘোষপাড়ার পূজা, সেবা সংঘের পূজা, শিববাগ, ক্রিয়াচক্র, দক্ষিণ কান্দার পূজা এগুলো স্মৃতি নিয়ে কথা বলে। নতুন জুতায় খসে গিয়েছে পায়ের চামড়া যত ততই আরো বেশি কিছু যেন সেকালের দিনগুলো।
দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাও পূজার সময়ে মনে আসে।নাবলা কথারা পুরো সময়জুড়ে কেবল চোখ নিয়ে ঘুরতো আশেপাশে।
শহরটা থেকে দূরে নোঙর ছিঁড়ে গেছে আমাদের। তবুও সময় জানে সময়ের অভিঘাত দেখা যায়।
১০। ১০২ জ্বর আসছে
আচ্ছা, জ্বরের যে ঘোর নেশা লাগানো একটা বিষয় আছে, যার মধ্যে আঠালো ভেজা ডিম ডিম একটা কটু গন্ধ থাকে, তার নাম বোধ করি জানা যায় না! আমারতো মনে হয়, জ্বর মানেই মায়ের ঠাণ্ডা হাতটা কাজের ঘোরে কপাল ছুঁয়ে যাবে পরপর যখন তার থেকে উঠে আসবে পটলের সাথে সরিষাবাটার গন্ধ। নারকেল তেল দিয়ে মেনিমাছ ভাজি করলে কিংবা কাঁচা শুঁটকি মাছের ভটভট গন্ধটাও জ্বরের সাথে লেগে থাকে।
জ্বর থাকতে থাকতে মনে হয় পুঁইপাতার মতো একটি টিকটিকি অনেকগুলো গ্যালাক্সি অতিক্রম করে নেমে আসছে আমার কাছে, আমি যেন একটা কচ্ছপ! ঢিমঢিম এক অসাড়তা পিঠে চড়িয়ে চলছি খরগোশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে এক ধূর্ত শেয়ালের কাছে একটা মুক্তার মালা নিবো বলে। জ্বর হলেই জানি আমরা কতো নির্বোধ, শেয়ালটা মুক্তার বিনিময়ে যে শিকল ঠুকরে যায় পিঠের চামড়া ফুটো করে তার ভার বইতে থাকে কচ্ছপের মতো মানুষ।
কচ্ছপের পিঠে চড়িয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম আমিও, একটা জামদানী শাড়ির ভাঁজ খুলে ঠিকঠাক মতো জড়িয়ে ধরতে গেলেই বলা হলো এটা মসৃণ; কোনো এক প্রিয়তম কেবল জড়ায় লোভী নারীর শরীরে, শরীরকেই নারী বলে তবে!
জ্বরটা রাতেই নির্ঘাত বাড়ে, অন্ধকারে ঘিরে বসে জোনাকির স্রোত, অজস্র মানুষের মতো তারা কান্না করে, হয়তো খুঁজে মৃতমুখ অথবা হারানো অসুখ। জলের শব্দের সাথে কথা বলতে বলে,
চুলে বিলি কাটে প্রিয়তম, একটা চুমুর বিমিশ্রণ থেকে বের হয়ে যায় রোদের ঘরে, এতো আলোয় নিজেদের পাসওয়ার্ড বদলাতে হয়, তবুও শরীর থেকে ঠিকরে এসে পড়ে আলো- বেদনার আলিঙ্গন পরস্পরকে শ্ছেদ করে নাইট্রাস হয়ে,,,
হয়তো আমার বেদনার অসম্ভব ভাষা জানো
জানো আমারই বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকাটা
সহস্র বনবীথিকা আমায় ছুঁয়ে যায় জানো
আরও জানো আমিই সেই অসমাপ্ত গল্পটা
,,,,,,,,, এমন একট রাত যার শেষবিন্দুটা আমাকে নিয়ে যাবে আবন্ধন কোলাহলে, চাইলেই ফিরতে পারবো না এমন রাত! অথচ বাইরে শুক্লপক্ষ; কথা বলতে ইচ্ছে করে যারে ভালো লাগে তার সস্নেহ ঠোঁটের মাপ পদ্ধতিতে। নিশ্চয়ই পৃথিবীতে আমাদের আবার দেখা হবে..
১১। ১০২ জ্বর আসছে
কয়েকটা স্লিপিং পিলের বদলে একটা তীব্র জ্বর যে হেলুসিনেশন আনে সেটি আমার দরজায় দুপুরে কলিং বাজাচ্ছিল। বিছানা থেকে দরজা ক্রমশ বাড়তে বাড়তে পতেঙ্গার অপরপ্রান্তে নাদেখা ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে জল থইথই করছে। কেও একজন বাজাচ্ছে মনে হচ্ছে এতে সে আনন্দ পাচ্ছে এবং এত আনন্দ অনেকদিন সে পায়নি। আমি থকথকে লাভার মতো লাল নকশি কাঁথা থেকে হাত বের করলেও শরীরটাকে ঠিক মানাতে পারছি না।মনে হলো মায়ের পেটের ভিতরের যে জল আমাকে ডুবিয়ে রেখেছে আমি যেন সেখানেই বড়ো হচ্ছি। তবে কে ডাকছে আমাকে! ময়লা নিতে আসছে কেও কিন্তু আমিতো ময়লা করিনি। জমেনি আমার কোনো আবর্জনা কেবল বাড়ছে বৃহস্পতির তুঙ্গে থাকা বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ। আমি কী যাবো? দেখবো, কে আসছে…সম্ভাব্য কেউ নেই আসার। কেননা সমস্ত পাতা ঝরে গেছে স্মৃতির উঠানে! কেও যেন বলছে আমার নাম বদলে গেছে অথচ আমার ধবধব করা নিবন্ধন আছে। বাবা তারিখ ভুল করেছে আর মা বলেছে আশ্বিনে শীত পড়লে আমার জন্ম!
থেমে গেছে কলিং…আচ্ছা কে আসছিল বলা যায় আমাকে! সঙ্গত বিকেলে আসে অনেকগুলো রূপকথার সন্ধ্যা, কানিবকগুলো ঘরে ফিরে আসার আগে থেকে থেকে ডাকছে মা। আমার আড়ষ্ট চুল আটকে আছে ছিটকিনির ডালে। রাতে জেঠিমা নিশ্চয়ই মাছ ভাজার সাথে ডাল চচ্চড়িতে লংকা দিবেন। আমি গন্ধ পাচ্ছি ধূসর ধূপের। জানালার কাছে গিয়ে মাকে ডাকলে দরজা খুলবে জানি কিন্তু জানালাটার উপর ছায়া কেবল একটি নতুন নামে ডাকছিল…..
আমি জানি কেও আসেনি! ভ্রম মায়ার মাত্রা নির্ণয় করতে হয় আমার! আসাদ এসেছে, মায়া নিয়ে বলেছে ম্যাডাম একদিনে কী অবস্থা! আসাদ আমাকে সকালে চা আর পেপার দেয়। কম্পিউটারের লক খুলে আর আসার সময় নিয়ম করে বলবে, ম্যাডাম দুইটা মোবাইল নিছেন! পরিভ্রমণের কোনো সূত্র আমি জানি না! জানি না কে এসেছিল। মাসের শেষে হলে বিল নিতে কেও আসতো! আসেনি বলে জানা যায় না এটা আমার জন্য! ওফ রামায়ণ শুরু হলে মা বলবেন তোরা ভাত খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর! আমিও ভাত খেতে চাই! নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যাই অসহায় ক্ষুধার্ত বাঘের কাছে দাপিনী হরিণ যারে দিতে পারে মুক্তি…
কী চাও শঙ্খচিল
উন্মুক্ত আকাশ
না
উদ্ভ্রান্ত প্রেম?
-সমাপ্ত-
বোকার স্বর্গ; আসলে স্বর্গটা কেমন? বোকাই বা কেমন?
বোকা বিডি নির্দিষ্ট একজনার অভিব্যক্তির প্রকাশ। একজনার দেখা, একজনার ভালো লাগা, মন্দ লাগার প্রকাশ্যরূপ। জন সমাজে এর প্রভাব পড়বার মতো কোনো কারণ নাই। একজনার দেখা আদি এবং অন্ত-বর্তমান। ভবিষ্যতের কোনো প্যারাদায়ক পরিধি নাই। একজনার হয়তো আলাদা কোনো ভঙ্গি আছে- একজনা সেইটা প্রকাশ করবে নিঃসঙ্কোচিত্তে। সমাজের সাথে এর কোনো সম্পৃক্ততা নাই। আবার এইসব কাকতালীয় নয়। কারণ ওইটা একজনার দেখা, অভিজ্ঞতালব্ধ, কাল্পনিক কোনো মিঠাই না। এইসব একজন বোকার কর্মকাণ্ড আরকি। চতুর সমাজে এই বোকার সংখ্যাই বেশি। যারা প্রতিপদে প্রতি কর্তব্যকাণ্ডে আপাদমস্তক বোকাই থেকে যায়। এই প্রচেষ্টা তাদের একার চেষ্টা অথচ তাদের কোনো গোত্রীয় অভিধান নাই। তারা না সংখ্যাগুরু না সংখ্যালঘু। বোকা বহুবিধ সমাজে একক আবার একক হয়ে পুরোসমাজে সে অসংখ্য।
তাই আপনি নিঃসঙ্কোচিত্তে লিখে যেতে পারেন। কারণ আপনি বোকা। বোকা অনর্গল, একমাত্র ডেম কেয়ার জন। বোকাই প্রকৃত সাহসী। বোকা হওয়ার কারণেই তার কোনো ছলচাতুরী নাই। অযথা অন্যকে তৈলমর্দন কিংবা অযাচিত নমো নমো করবার কোনো কারণ বোকার কাছে নাই।
পৃথিবীতে একমাত্র বোকাই- সত্য, মজবুত, অনড়। বোকা পিছলে পড়ে না। বোকা সরল চলতে থাকে। বোকার জগতে আপানাকে স্বাগত জানাতে চাই। আপনি বোকা হলে আসুন এই বোকার দলে। অযথা এই সাম্রাজ্যবাদী বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির যাতাকলে পিষ্ট না হয়ে আসুন বোকার স্বর্গে বসবাস করি।