প্রতিদিন ১৩ মিলিয়ন লিটার পানি খাচ্ছে গুগল, মেটা এবং ওপেনএআই!

পানি

Table of Contents

প্রযুক্তি বনাম প্রকৃতি: মানুষ কি তবে ধ্বংসের পথেই হাঁটছে

আমরা যখন AI চ্যাটবট বা সার্চ ইঞ্জিনে একটা প্রশ্ন করি, তখন সেগুলোর উত্তর তৈরি করতে শুধু বিদ্যুৎ নয়—ব্যাপক পরিমাণে পানি বা জলও খরচ হয়। গুগল, মেটা এবং ওপেনএআই-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা প্রতিদিন কোটি কোটি লিটার জল ব্যবহার করছে তাদের ডেটা সেন্টার ঠান্ডা রাখতে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এসব কোম্পানি এখন পানি-নির্ভর কুলিং সিস্টেমের দিকে ঝুঁকছে, যার ফলে পানির উপর সৃষ্টি হচ্ছে বিপুল চাপ।
এই কনটেন্টে আমরা দেখব কে কতটা পানি ব্যবহার করছে, কেন এটা উদ্বেগজনক, এবং ভবিষ্যতের জন্য এর কী পরিবেশগত অর্থ দাঁড়াতে পারে।
তাই বিষয়টি খোলাসা করবার জন্য সবার আগে ডেটা সেন্টার নিয়ে আমরা একটা প্রাথমিক ধারণা নিয়ে নিই।

জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন পানির ব্যবহার (প্রায়)
Google: 2.3 বিলিয়ন লিটার / বছর → প্রায় ৬.৩ মিলিয়ন লিটার/দিন
Meta: 2.1 বিলিয়ন লিটার / বছর → প্রায় ৫.৮ মিলিয়ন লিটার / দিন
OpenAI (Microsoft Azure সহ): নির্দিষ্ট হিসাব নেই, তবে অনুমান অনুযায়ী
১ মিলিয়ন লিটার / দিন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মোট: আনুমানিক ১৩ মিলিয়ন লিটার / দিন (১৩ কোটি লিটার)।

ডেটা সেন্টার কী এবং কীভাবে কাজ করে
ডেটা সেন্টার হলো এমন একটি বিশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার যেখানে লক্ষ লক্ষ সার্ভার, রাউটার, স্টোরেজ সিস্টেম ও কম্পিউটিং যন্ত্রপাতি থাকে, যা প্রতিনিয়ত আমাদের অনলাইন কার্যক্রমের পেছনে কাজ করে—যেমন, গুগলে সার্চ করা, মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠানো, বা AI চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলা। এইসব সার্ভার ২৪ ঘণ্টা অনবরত কাজ করে, আর তাই প্রচণ্ড পরিমাণে তাপ উৎপন্ন করে। সেই অতিরিক্ত তাপ দূর করতে লাগে কুলিং সিস্টেম, যা অনেক ক্ষেত্রে জল-নির্ভর হয়ে থাকে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ গ্যালন জল ব্যবহার করে এসব ডেটা সেন্টারগুলো ঠান্ডা রাখা হয়—না হলে এই সার্ভারগুলো গরম হয়ে পুড়ে যেতে পারে বা কাজ বন্ধ করে দিতে পারে।

প্রযুক্তি জায়ান্টদের হৃদপিণ্ড এখন ডেটা সেন্টার
গুগল, মেটা, ওপেনএআইসহ সব বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডেটা সেন্টারকে তাদের অপারেশনের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ AI মডেল চালানো, ভিডিও স্ট্রিমিং, সার্ভিস হোস্টিং, ক্লাউড স্টোরেজ—সবকিছুই এই সার্ভার ফার্মের ওপর নির্ভরশীল। যতই প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, ততই এই ডেটা সেন্টারগুলোর আকার বাড়ছে এবং তার সঙ্গে বাড়ছে পানির চাহিদা। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পানি-নির্ভর কুলিং-এ ঝুঁকছে, যা ভবিষ্যতে পানির টেকসই ব্যবহারে প্রশ্ন তুলছে। এভাবে ডেটা সেন্টার কেবল প্রযুক্তির নয়, পরিবেশ-নির্ভর নীতিরও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।

Meta-এর ডেটা সেন্টার: শহরের মতো এক পরিকাঠামো

Meta-এর বিশ্বব্যাপী ডেটা সেন্টার ক্যাম্পাসের মোট আয়তন হতে পারে ৫ – ৭ বর্গকিলোমিটার। যা একটি ছোট শহরের সমান!

Meta (Facebook-এর প্যারেন্ট কোম্পানি) বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল ডেটা সেন্টার তৈরি করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ডেটা সেন্টারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া, নিউ মেক্সিকো ও ওরেগনে অবস্থিত। একটি Meta ডেটা সেন্টারের আয়তন প্রায় ১০ লক্ষ বর্গফুট বা তারও বেশি হতে পারে—যা ১৭টি ফুটবল মাঠের সমান! এদের ক্যাম্পাস-স্টাইলের গঠন অনেকটা ছোটখাটো শহরের মতো, যেখানে সার্ভার বিল্ডিং ছাড়াও কুলিং টাওয়ার, পানির ট্যাঙ্ক, এবং বিদ্যুৎ ব্যাকআপ ইউনিট থাকে। Meta মূলত AI মডেল প্রশিক্ষণ ও ভিডিও কনটেন্ট হোস্টিংয়ের জন্য এই বিশাল স্কেল দরকার করে।

Google-এর ডেটা সেন্টার: দানবীয় গ্লোবাল নেটওয়ার্ক
Google-এর ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বৈশ্বিক। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এবং এশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা Google-এর ডেটা সেন্টারগুলো অনেক সময় ৪-৫টি বিল্ডিং মিলে গঠিত একটি ক্যাম্পাসে গড়ে ওঠে। একটি ডেটা সেন্টারের আয়তন সাধারণত ৫ থেকে ১০ লক্ষ বর্গফুট পর্যন্ত হতে পারে। তবে যেহেতু Google-এর সেবা ব্যাপক, তাদের “Hyperscale” ডেটা সেন্টারগুলোর কনফিগারেশনও অন্যদের চেয়ে ভারী। শুধু একটি Google সার্ভার ফার্ম প্রতিদিন কোটি কোটি সার্চ, ইউটিউব স্ট্রিম ও ক্লাউড ডেটা প্রক্রিয়াজাত করে—এমন এক গ্লোবাল প্রযুক্তির শিরা-উপশিরা।

OpenAI-এর ডেটা সেন্টার: গোপন, তবু তীব্র
OpenAI সরাসরি নিজস্ব ডেটা সেন্টার চালায় না; তারা মূলত Microsoft-এর Azure ডেটা সেন্টারের ওপর নির্ভর করে। Microsoft-এর ওয়াশিংটন ও আইওয়াতে থাকা Azure ডেটা সেন্টারগুলোই GPT মডেল ও অন্যান্য AI সেবা চালায়। একটি Azure AI ডেটা সেন্টার সাধারণত ৩০০,০০০ থেকে ৬০০,০০০ বর্গফুট পর্যন্ত হয়, তবে এটি উচ্চ-ঘনত্বের AI সার্ভার দিয়ে পূর্ণ থাকে। যেমন GPT-4 মডেল চালাতে হাজার হাজার NVIDIA GPU ব্যবহার হয়—যা প্রচণ্ড বিদ্যুৎ ও কুলিং চাহিদা তৈরি করে। তাই আয়তনে হয়তো Google বা Meta থেকে কম, কিন্তু প্রযুক্তিগতভাবে এটি অনেক বেশি “intensive” এবং রিসোর্স-চাপযুক্ত।

তাহলে আমরা বুঝে গেলাম ডেটা সেন্টার কী আর একেকটি ডেটাসেন্টার কী ঘনত্বের জায়গা দখল করতে পারে। এটি একটি তুল্য ধারণা মাত্র। প্রকৃতচিত্র আরো ভিন্ন হতে পারে বলেই মনে করছি। টেক পত্রিকাগুলো কিংবা মূল ধারার গণমাধ্যমগুলো যা প্রকাশ করে এবং উপাত্ত বিশ্লেষণ করে যা জানা যায় তা বাস্তবতা থেকে বেশ দূরেরই হয়ে থাকে। এ নিয়ে অন্য একটি বিষয়ে খুব শীঘ্রই প্রকাশ হবে ঘরের ময়লা বনাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল ময়লা!   

তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু এর পেছনে যে প্রাকৃতিক সম্পদের বিরাট খরচ হচ্ছে, তা খুব কম মানুষই জানে। বিশেষ করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও বিগ ডেটা প্রসারের ফলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিদ্যুৎ খরচ কমাতে গিয়ে পানির উপর বিপজ্জনক পরিমাণ চাপ তৈরি করছে

গুগল, মেটা ও ওপেনএআই-এর ডেটা সেন্টারগুলো প্রতিদিন কতটুকু পানি ব্যবহার করছে এবং তা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা দিচ্ছে জানবার আগে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে জেনে নিই

Evaporative cooling বা বাষ্পীয় শীতলীকরণ প্রযুক্তি

এখনকার সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পরিবেশবান্ধব কুলিং মেথডগুলোর একটি, বিশেষ করে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। এই পদ্ধতিতে জল বাষ্পীভূত হয়ে তাপ শোষণ করে পরিবেশকে শীতল রাখে, ফলে প্রচলিত এয়ার কন্ডিশনের তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ হয়। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন Meta, Google, Microsoft, এবং OpenAI—এই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছে মূলত তিনটি কারণে:

প্রথমত, এটি টেকসই—কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমায় ও বিদ্যুৎ খরচ সাশ্রয় করে।

দ্বিতীয়ত, এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক, কারণ দীর্ঘমেয়াদে কম মেইনটেন্যান্স ও কম ইউটিলিটি খরচ হয়।

এবং তৃতীয়ত, হাই-পারফরম্যান্স ডেটাসেন্টার অপারেশনের জন্য এটি বেশি কার্যকরী, কারণ বাষ্পীয় কুলিং সরাসরি হাই-টেম্পারেচার GPU ও CPU কোরকে ঠান্ডা রাখতে সক্ষম। তবে এই পদ্ধতির একটি সীমাবদ্ধতা হলো জল খরচ—প্রতি বছর লাখ লাখ গ্যালন জল ব্যবহার হয়, যা পরিবেশগত দিক থেকে নতুন কিছু প্রশ্নও তুলে দিচ্ছে। তবুও, টেক জায়ান্টরা এর উন্নত ভার্সন (যেমন hybrid cooling) নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে যাতে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়।

তাহলে চলুন এবার দেখি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কতো পানি বা জল খাচ্ছে প্রতিদিনি-


🔵 ১. গুগল (Google):

  • ✅ প্রতিদিন ব্যবহার করে: ৪.৫–৫.৫ লক্ষ গ্যালন

  • 💧 লিটারে: প্রায় ১.৭–২.১ মিলিয়ন লিটার

  • 🏭 উদ্দেশ্য: ডেটা সেন্টারগুলোর সার্ভার কুলিং, মূলত evaporative cooling ব্যবস্থার মাধ্যমে।

  • 📈 ২০২১ সালে গুগল মোট ব্যবহার করেছে: ৪.৩ বিলিয়ন গ্যালন!


🟣 ২. মেটা (Meta):

  • ✅ প্রতিদিন পানি ব্যবহার: ৩০ লক্ষ গ্যালন (প্রতিটি বড় ডেটা সেন্টার)

  • 💧 লিটারে: প্রায় ১১.৩ মিলিয়ন লিটার

  • 📊 ২০২২ সালে মেটার রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের একাধিক ডেটা সেন্টার মিলে বছরে ১.৪ বিলিয়ন গ্যালন খরচ করে।


⚫ ৩. ওপেনএআই (OpenAI):

  • ✅ নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার তথ্য এখনো প্রকাশ পায়নি, তবে গবেষণায় দেখা গেছে:

  • একটি GPT-3 ট্রেনিং সেশন একাই খরচ করতে পারে প্রায় ৭০০,০০০ লিটার জল (একটি ছোট শহরের একদিনের ব্যবহার)।

  • ChatGPT-এর মতো AI টুল যত বেশি ব্যবহার হবে, তত বেশি সার্ভার ক্লাস্টার চালু রাখতে হয়—ফলে বাড়ে পানি-জল ও বিদ্যুৎ উভয়ের চাপ।

⚠️ বিদ্যুৎ বাঁচাতে গিয়ে পানির উপর চাপ: কীভাবে?

ডেটা সেন্টারগুলোর অন্যতম সমস্যা হলো তাপ উৎপাদন। সার্ভারগুলো ২৪/৭ কাজ করার ফলে প্রচুর গরম হয়ে যায়, যেগুলো ঠান্ডা রাখতে হয় কুলিং সিস্টেম দিয়ে।

🔄 দুটি কুলিং ব্যবস্থা আছে:

  1. Air cooling (তুলনামূলকভাবে বেশি বিদ্যুৎ লাগে)

  2. Evaporative water cooling (বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, কিন্তু প্রচুর পানি খরচ হয়)

বেশিরভাগ টেক জায়ান্ট এখন দ্বিতীয়টিকে বেছে নিচ্ছে—বিদ্যুৎ বাঁচাতে গিয়ে পানি অপচয়কে স্বাভাবিক করে তুলছে।


🌍 পরিবেশের উপর কী প্রভাব পড়ছে?

  • স্থানীয় পানির স্তর হ্রাস পাচ্ছে: ডেটা সেন্টার যেসব এলাকায় নির্মিত, সেখানকার মানুষ ও কৃষি কাজের পানির উপর বিরাট চাপ তৈরি হচ্ছে।

  • খরা প্রবণ এলাকাতেও ডেটা সেন্টার: যেমন অ্যারিজোনা, আইওয়া ইত্যাদি অঞ্চলে প্রচুর পানি ব্যবহার হচ্ছে, যেখানে প্রাকৃতিকভাবেই পানি সঙ্কট রয়েছে।

  • নিরব দূষণ: যদিও পানি পুনরায় প্রক্রিয়াজাত করা হয় কিছু ক্ষেত্রে, কিন্তু তাপমাত্রা ও ক্লোরিন মিশ্রণে পানি ব্যবহারের পর পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।


🚨 এই প্রবণতা কেন বিপজ্জনক?

  • 📉 ভবিষ্যতে যদি AI ব্যবহারের হার আরও বাড়ে (যা নিশ্চিত), তবে ডেটা সেন্টারের সংখ্যা ও পরিসরও বাড়বে।

  • 🌡️ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে পানির ঘাটতি মিলিয়ে একটি নতুন ‘পানি সংকট’ তৈরি হবে, যার পেছনে বড় ভূমিকা রাখবে এই গোপন অথচ ভয়ানক প্রযুক্তি চাহিদা।

✅ সমাধান কী হতে পারে?

  1. নতুন পরিবেশবান্ধব কুলিং টেকনোলজি উদ্ভাবন

  2. পানি পুনর্ব্যবহার (recycled water) ব্যবস্থার বাধ্যতামূলক ব্যবহার

  3. ডেটা সেন্টারগুলোর ট্রান্সপারেন্সি বৃদ্ধি: কে, কোথায়, কত পানি খরচ করছে—তা জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে।

  4. AI ব্যবহার ও ট্রেনিংকে আরও দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব করা


 

সবশেষে বলছি, আমরা যত বেশি ডিজিটাল হচ্ছি, ততই প্রকৃতির ওপর চাপ বাড়াচ্ছি—তা জল, বায়ু, স্থল আর প্রকৃতির অন্য প্রাণগত বস্তুগত সকল কিছুতেই আমরা মানুষেরা এক আগ্রাসী উন্নয়ন উদ্ভাবনের রোলার চালাচ্ছি- যা আমাদের আগামীকে সংকটাপন্ন করে তুলছে; হয়তো তা আমাদের ধারণারও বাইরে।
আজকের ChatGPT, গুগল সার্চ, ফেসবুক পোস্ট—সবকিছুর পেছনে থাকা ডেটা সেন্টারগুলো যদি এখনই পানি ব্যবহারে সচেতন না হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির বিনিময়ে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ চিরতরে হারাতে হতে পারে।

কিংবা মহাবিশ্বের অতলে এসব হয়তো কিছুই না!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top