ইফেলের কবিতারা

ইফেলের কবিতারা যেন এক আড়ালে থাকা আর্তনাদ, শব্দেরা নীরবতা হয়ে যেন কাঁদছে!

আর নীরবতাই চিৎকার।

এখানে ফুসফুস কেবল দেহের অঙ্গ নয়—সে এক বিদীর্ণ পাল, যাকে জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে ছুড়ে দেয় সময়ের তরঙ্গ। পোশাক এখানে শ্রেণির প্রতীক, অথচ কবি দেখেন—সবচেয়ে সত্য আর নগ্ন মুহূর্তগুলোই সবচেয়ে মানবিক।

যাদের কিছু নেই, তারাই যেন সব দেখতে পায়। এই ইফেলের কবিতারা যেন ভাষা ভেঙে পড়ে আবার দাঁড়ায়, যেন পাঠকের বুকের ভেতর একটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে—ধীর, কিন্তু স্থায়ী আকুলতার পরশ জাগায়।

-বোকা

প্রস্তরিভূত পাখিদের স্বর

একটা ফুসফুস
ছেঁড়া পালের মতো পতপত করে
ভাসিয়ে নিয়ে গেলো – সবুজ তরঙ্গে

একটা দারুক
প্রস্তরিভূত করেছিল পাখিদের স্বর
মৌনতাকে দিতে অমর প্রাণ

একটা ক্ষণদা
জলের আয়নায় নিজেকে দ্যাখে
জোছনালেপা রূপোলী কঙ্কাল

বাদামী বিস্কুট

কচি হাতে খামচে ধরা
ভূমধ্যসাগরের নোনা ঢেউ
আর সিরিয়ার তেতো আকাশের ঘ্রাণ
নরম আঙুলের মাঝে দোল খায়

বাদামী বিস্কুট – টিফিনের ঘণ্টা
স্কুলব্যাগে বাসা বাঁধে একদল পিঁপড়ে
একটা কাঠের ঘোড়া
আর কোনো প্রশ্ন নেই কারও কাছে

পৃথিবীর বুকে চেপে বসে প্রশ্নহীনতার বিশাল এক পাথর।

ইফেলের কবিতারা

কারো কারো পোশাক একই রকম
পোশাকের ভেতরটাও একই
পোশাকের ভেতরটা কেউ দেখে না
দেখার তেমন কিছু নেই
এমনও আছে পোশাক ছাড়াই কত সুন্দর
আস্ত একটা মানুষ মনে হয় তখন তাকে
যাদের পোশাক আছে
তারা লজ্জা পায়
গায়কের পোশাক
শিক্ষকের পোশাক
আমলার পোশাক
শিল্পপতির পোশাক
ব্যর্থদের কোনো পোশাক থাকে না
ব্যর্থরা কবিতা লেখে
আর বেশ্যার পোশাক ঝোলানো থাকে
গেরস্তদের ঘরের বারান্দায়

ইফেলের কবিতারা

শিরোনামহীন

ধরা যাক
তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো
জারি করা হলো অর্ডিন্যান্স
নিষিদ্ধ করা হলো তাকে খোলা রাস্তায়
একঘরে করে দিল সমাজপতিরা
তার আর বেরোবার পথ নেই
সমস্ত পথের ওপর বিছিয়ে রাখা নিষেধাজ্ঞা
এমনই এক দিনে কবিতাটা টের পেল
– কী প্রবল তার শক্তি!

দুর্দিনে বেঁচে থাকার স্বপ্ন

তোমার আধখানা পাউরুটিতে
বারুদের গন্ধ
গলগল করে রক্তের মতো
থেতলানো চোখ বেয়ে পড়া
দুর্দিনে বেঁচে থাকার স্বপ্ন
অথচ তুমি জানোই না
– এই পৃথিবীতে,
ক্ষুধা ছাড়া আর কিছু টিকে থাকবে না।

কৃষকের সন্তান

ক্ষুধা আর নোনা চোখ
ছয়টি অভুক্ত পেট
বহুদিন পর ভাতের গন্ধে
ছিটানো নুন মেখে খেয়ে ঘুমিয়ে যায়
তারা কৃষকের সন্তান

আয়না

আয়নায় যে দাঁড়াল
যেদিন মুখোমুখি হলাম আমরা
জেনে নিলাম
একে অপরকে
আর জানলাম – আমার অসম্পূর্ণতা
তার সাথে ভীষণ মিলে যায়

বিকেলের এলিজি

চোখ উড়ে গেছে
ফেরে না আর – জানালার গরাদে রেখে গেছে বিষন্ন হাহাকার
পা দুটো গেছে চলে
নিজস্ব স্বাধীনতায় – নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন ঝুলিয়ে দিয়ে হুইলচেয়ারে
দেয়ালের শ্যাওলা
সাবধানী পায়ে – চুরি করে নিয়ে গেছে বিকেলের এলিজি

কবি জাইন ইফেল। পুরো নাম সৈয়দ জয়নুল আবেদীন। পেশায় উন্নয়নকর্মী। যুক্ত আছেন উন্নয়ন সংগঠন এবং গণমাধ্যমের সাথে। 

বোকার দৃষ্টিতে সরল সোজা সজ্জন- কবি জাইন ইফেল। তার কবিতা মোহাচ্ছন্ন করবার যোগ্যতা রাখে। একটিবার চুপটি করে পড়ে দেখুন। পরিচিত শব্দ পরিচিত অনুভূতি। যে কোনো সময় যেন বেজে উঠে জলতরঙ্গের লহড়ী। যেন ভালো লাগা যেন বহু দুখে দুখি। কবির সদা সমৃদ্ধি কামনা করি। -বোকা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top