দ্বান্দ্বিক মধ্যবিত্তের ঘরে মার্ক্স!
Reading Time: 17 minutes‘দ্বান্দ্বিক মধ্যবিত্তের ঘরে মার্ক্স!’ শিরোনাম পড়েই হয়তো কয়েকটা গাল মুখে চলে আসতে পারে কারো কারো। তাতে কী, আমি বরং আমার মতোই ঘুরপাক খাই! নিজের পরিধিটাও অন্তত চেনা যাবে। কিন্তু চেনা হয় না, বরং দূরের মনে হয়। চিনতে গিয়ে অচেনা হয়ে যাওয়াই হলো মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্ব। ধরবো? না, থাক! চুমো-টুমো খাবো? না, থাক! ভিতরে এক দঙ্গল পশুকে আটকে রেখে উপরে সাধু সেজে বসে আছি। এটাও দ্বন্দ্ব। মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্ব, বস্তুর সাথে মানসিকের- একটা সক্রিয় সম্বন্ধ আছে। ধরো, ঘুষের টাকাটা তুমি নিতে চাইছো, কিন্তু তুমি মানসিক ভাবে সবল নও, তোমার হাত কাঁপছে, কিন্তু শেষে নিয়েছো এবং পরে এই অপকর্ম আর করবে না বলে দুই প্যাগ মেরে এসেছো। বস্তুর সাথে এই যে তোমার মানসিক সংঘর্ষ সেটি তোমার শ্রেণির চরিত্রকে কখনোই সামনে ঠেলে আনে না। বরং তোমার শ্রেণির চরিত্র লোপ করে তোমার নিজেকে নতুন শ্রেণিতে উন্নীত করে। সোজা-সাপটা বললে, তুমি হয়ে পড়ো, মিডল ম্যান, দালাল। তুমিই তাবেদার, বদমাশ, কালের বিশ্বাসঘাতক।
মধ্যবিত্তকে আমি সবসময় দ্বান্দ্বিক বলি। কারণ, বাঙালি মধ্যবিত্ত তার যুগোব্দি কখনোই কোনো সিদ্ধান্তে ফলাফল ভাবতে পারেনি। ফলাফল ভাবতে গিয়ে বাঙালি মধ্যবিত্ত শব্দের অবনমন ঘটায়। যেমন: বন্ধুকে সে চুদির ভাই বলে! সুন্দরকে খুব সুন্দর বলে। ভালোকে খুব ভালো বলে। এটাও বাঙালি মধ্যবিত্তের হিপোক্রেসি। তো এই হিপোক্রেটদের নিয়ে কী করে মার্ক্স কথা বলতে আসবেন? এই প্রশ্নটাও দ্বন্দ্ব।
মার্ক্সীয় দর্শনের প্রধান দুটি মুখ আছে- বস্তুবাদ এবং দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি। এই দুই মুখের পরম্পরায় মার্ক্সীয় দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের উদ্ভব। এইটা সহজেই মেনে নেয়া যায়। তবে বস্তুবাদ কিংবা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি বিষয়ক কথাবার্তা যে মার্ক্সই প্রথম বলেছেন তা নয়। বরং বস্তুবাদ নিয়ে আলোচনা করলে গ্রিক দার্শনিক থেলিস, ডেমোক্রিটাস কিংবা ইপিকিউরাসের নামও উঠে আসে। যার ধারাবাহিকতা পাওয়া যাবে থমাস হব্স, ফয়েরবাখ আর এংগেলসের মাঝেও। অর্থাৎ, চিন্তক মাত্রই বস্তুবাদ এবং দ্বান্দ্বিকতার ভেতর কিংবা কাছাকাছি কোথাও অবস্থান করেন। মানুষের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, মানুষ ক্রমশ বিভিন্ন দ্বন্দ্বের ভিতর দিয়ে আনাগোনা করে। শ্রেণি, বর্ণ, লিঙ্গ, ধর্ম, জাত-পাত, রাজনীতি, ব্যক্তিস্বার্থ এরকম আরো অনেক বিভাজনের মধ্য দিয়ে নিজেকে দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়িয়ে রাখাটাই মানুষের চিরায়ত অভ্যাস। যদিও মার্ক্স-এর মতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সকল দ্বন্দ্বের মূল হল শ্রম ও পুঁজির মধ্যে দ্বন্দ্ব।
তবে বলে রাখা ভালো যে থিসিস, অ্যান্টি থিসিসি এবং সিনথিসিস সম্পর্কে আপনাদের ধারণা রাখা উচিত। এতে পাঠ্য সহজবোধ্য হয়ে উঠবে। কার্ল মার্ক্স দেখিয়েছেন, এই বিশ্বভ্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তুর মধ্যে বিরােধ অনিবার্য কিংবা ঘটমান। অর্থাৎ প্রতিটি বস্তুর মধ্যেই পরস্পরবিরােধী শক্তি ( ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক) থাকে। এর একটিকে বলা হয় বাদ (Thesis / থিসিস) অপরটিকে বলা হয় প্রতিবাদ (Antithesis / অ্যান্টিথিসিস)। আর এই বাদ প্রতিবাদের সংঘর্ষে অন্য এক অবস্থার উদ্ভব হওয়াকে বলে, সম্বাদ (Synthesis / সিনথিসিস)। যদিও সম্বাদকে আমাদের পরিচিত সকল ‘পীরগণ’ বরাবরই উন্নততর বলেই প্রতিষ্ঠা করবার চেষ্টা করেছেন! যা খুব হাস্যকর। তারা বলবার চেষ্টা করেন, পুরােনাে থেকে যখন নতুনের আবির্ভাব ঘটে তখন নতুন, পুরােনাের থেকে গুণগত দিক থেকে উন্নত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। সম্বাদের এই ধারণাটিকে আমি ভ্রান্ত বলছি। কারণ এটি সবক্ষেত্রে সঠিক নয়। এর পক্ষে একটি উদাহরণ দিচ্ছি- একটা রোবট যাকে মানবিক গুণ দেয়া হলো, কিন্তু তার পুরো শরীরটাই লোহার সে কী করে তার মানবিক প্রেমিকার সাথে সেক্স করবে? এইটা কী উন্নতি নাকি অবনতি? দ্বন্দ্ব চলবে। তবে হ্যাঁ, বাদ এবং প্রতিবাদের সংঘাতে যে সম্বাদের উৎপত্তি সেই সম্বাদেরও মধ্যেও কিন্তু বাদ এবং প্রতিবাদ ঘটবে এবং আরো এক সম্বাদের উদ্ভব ঘটবে। আর এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার সরলীকরণ চিন্তাটাই আমার এই আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে। যদিও একশ বছর পর মার্ক্স কেন ফিরে এলেন সেই নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ আমি এখনও মার্ক্সের উপর আস্থা রাখি। মার্ক্স মরে যায়নি। কারণ আমি সম্বাদে যে বাদ প্রতিবাদ দেখি তা উনবিংশ শতকের মতোই বিরাজমান। প্রযুক্তির উত্থানকে আমি কেবল পুঁজিবাদী হাতিয়ার হিসাবেই বিবেচনা করছি। এর বেশি কিছু নয়। কারণ আমি তো দেখছি আমার প্রকৃত কৃষিকে কী করে হত্যা করা হয়েছে। আমি তো দেখেছি, আমার মিঠাজলাভূমিকে কী করে ধ্বংস করা হয়েছে। এখন, আমাকে পানি কিনে খেতে হয়! যে পোশক বানায় সেই থাকে ন্যাংটা হয়ে!
তো আমি কেন, দ্বান্দ্বিক মধ্যবিত্তের ঘরে মার্ক্স! এই শিরোনাম ব্যবহার করলাম?
সহজ কথায় বললে, এটা আমি গালি হিসাবে দিলাম। কারণ আমি জানি এরা কেউ মার্ক্স নিয়ে নূন্যতম পড়াশোনা করে না এবং করেনি। এরা মার্ক্সকে কী করে বেচা যায় সেই পথটি খোঁজার পায়তারা করছে। নিজেদের কী করে আরো সুবোধ সুশীল বলে পার পাওয়া যায় সেই পথটি পেতে চাইছে।
যেই পায়তারা মার্ক্স জীবিত থাকাবস্থা থেকেই চলছে। কারণ মার্ক্স তার বয়ানে স্পষ্টতই শ্রেণির চরিত্র উল্লেখ করে দেয়িছেন। আর এই উন্মোচিত চরিত্র নিয়ে পুঁজিবাদী দালালদের ভয়টা আগেও ছিল এখনও আছে। এই নিয়ে অনেক কথাই বলা যেতে পারে।
কিন্তু এই আলোচনার সাথে সোহোতে মার্ক্সের সম্পর্কটা কী?
আছে, কারণ হাওয়ার্ড জিনের নাটকে আমরা মার্ক্সকে সাধারণের কাতারে নেমে এসে সাবলীল কথাবার্তা বলতে দেখি। যারা মার্ক্সকে অবতারের পর্যায়ে নিয়ে গেছে- তাদের গালে এই নাটক একটা চপ্টাঘাত। আবার যারা মার্ক্স চর্চা করেন এবং আমার মতো অসংখ্য গোলমাল বাঁধান তাদের জন্য এই নাটক মার্ক্সকে সহজে পাঠ করবার উপাদান দিবে। আর আমি চাই এদেশের সকল তরুণ মার্ক্সকে লালন করুক। এক নয়া জীবনের সূচনার করার স্পৃহা পাক। তারা নিজের সাথে দ্বন্দ্ব নিয়ে রা টা করুক। ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে নিজের জীবনকে এগিয়ে নিক সামনে। সারা পৃথিবীর মালিকানা বুঝে নিক তারা।
সোহোতে মার্ক্স
আমার কাজ হইলো দ্বন্দ্বকে জিইয়ে রাখা। দ্বন্দ্ব মানেই চির নবীন অথচ বার্ধক্যে লীন। যাই হোক মার্ক্স ইন সোহো প্রথম পড়েছিলাম এনটিভির অনলাইন পোর্টালে- দেবজ্যোতি রুদ্রের অনুবাদে। পড়ার পর অনেকক্ষণ নির্বিকার হয়ে ভাবছিলাম, মূল লেখক (হাওয়ার্ড জিন) আসলে কী প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন? সেটি বুঝবার জন্য কোনো কূল-কিনারা পাইনি। তবে হাওয়ার্ড জিন যেইভাবে মার্ক্সকে তুলে ধরেছেন, আসলেই কী মার্ক্স অতোটা সহজপাঠ্য কিংবা সহজবোধ্য? অন্তত দাস ক্যাপিটালের খণ্ডগুলো না পড়লেও যাদের হাত বুলানোর ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে, তাদের কাছে? তবে মার্ক্সের ব্যক্তিক জীবন মনোলগ যেইভাবে উপস্থাপন করেছেন সেইটি আমাকে বশে নাড়া দিয়েছিল। যে কাউকেই নাড়া দিবে। কারণ এতো সহজে মার্ক্সকে সাধারণের কাতারে নামিয়ে আনার দুঃসাধ্য আর কেউ দেখিয়েছেন কিনা আমার জানা নেই।
এনটিভি’র অনলাইনে প্রথম পড়া মার্কস ইন সোহো’র অনুবাদ।
এই ধারণার পর অতি সম্প্রতি জানলাম, জাভেদ হুসেন অনুবাদ করেছেন মার্ক্স ইন সোহো বা সোহোতে মার্ক্স। একই বিষয় বারবার অনুবাদ হলে ধরে নিতে হবে শেষ অনুবাদটিই সব থেকে শক্তিশালী হবে। (এখানেও বাদ প্রতিবাদ এবং সম্বাদের কারবার, অর্থাৎ, দ্বন্দ্ব।) তাই অনুবাদটি পড়বার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। কিন্তু অনুবাদটি পড়ার চেয়ে দেখায় গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এইবার কেবল অনুবাদে থেমে নেই, অনুবাদ সরাসরি রূপ নিয়েছে নাটকে, মঞ্চে। একাঙ্কিকার মূল নাটকটি জাভেদ হুসেনের অনুবাদে মঞ্চে প্রযোজনা করছে, যাত্রিক এবং বটতলা। আর নির্দেশক নায়লা আজাদ।
ব্যাপারটা আমি অন্য এংগেল থেকে ভাবছি- আমাদের দেশের মঞ্চ এখনো শ্রেণি দ্বন্দ্ব ভাঙতে পারেনি। শ্রেণি ভাঙবার জন্য পর্যাপ্ত নাটকীয় উপাদান নেই আমদের মঞ্চ নাটকে। কারণ মঞ্চের দর্শককে সোজা বাংলায় বললে, সহজেই মেরুকরণ করা যায়। অথচ এক সময় যারা গ্রামে গঞ্জে যাত্রা দেখেছেন, তারা জানেন আদি লোকমঞ্চ কী করে শ্রেণি ভেঙে দিয়েছিল। তাই আমি আসলে ভাবছি- হাওয়ার্ড জিনের নাটকটি আমাদের দেশের কোন শ্রেণির সম্বাদ হবে? কিংবা কোন কোন শ্রেণির বাদ প্রতিবাদ ঘটাবে? ভাবছি আর ভাবছি। রা টা করছি না! কারণ আমি জানি না মার্ক্স ইন সোহো’র অনুবাদকের শ্রেণি চরিত্র, জানি না নির্দেশকের শেণি চরিত্র। জানি না প্রযোজক দলের শেণি চরিত্র। তারা কী স্রেফ নাটক নির্মাণের জন্য শ্রম দিয়েছেন নাকি শ্রমের দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছেন? নাকি পুঁজিবাদের উপর মার্ক্সের পাণ্ডিত্যপূর্ণ গভীর অথচ সবল সরল বয়ান আর ক্ষোভকে সামনে এনেছেনে? এই বোঝাপড়াটা বুঝবার জন্য নাটকটা আমি দেখতে চাই। যদিও বটতলা সম্পর্কে একটা চিত্তাকর্ষক ধারণা আমার আছে। আমার পোষণ করা ধারণাকে মার্ক্সীয় দর্শন দিয়ে খণ্ডন করতে না পারলেও হেগেলীয় দর্শন দিয়ে সহজেই খণ্ডন করতে পারি। বস্তুর চেয়ে মন এবং মননকে তাদের কাছে আমার অগ্রগণ্য মনে হয়েছে। যদিও আমি মনে করি উন্নততর সমৃদ্ধির পথে ধাবিত এবং একনায়ক একটা দেশে এইটাই বা কম কীসে? অন্তত প্রতিবাদ তো জারি আছে।
তো দেখবো যখন- প্রথম শো-ই দেখতে হবে। মঞ্চে প্রথম শোটা দেখবার একটা মজা আছে। মঞ্চে একমাত্র প্রথম শোটাই নিজের চোখে দেখা যায়। পরের শোগুলো দেখা আসলে অন্যের চোখে দেখে তারপর নিজের চোখে দেখা।*** (ব্যাপারটা কারো কাছে ঝাপসা লাগলে আওয়াজ দিয়েন।) এতে নিজের একান্ত ধারণাবোধের লোপ ঘটে এবং অপরাপর ধারণাবোধ ক্রমশ আক্রান্ত করে। মঞ্চে সমসাময়িক প্রযোজনাগুলোয় আমি কখনোই এই সংঘাতে আক্রান্ত হতে চাই না। তাই এক দঙ্গল কাচ্চা-বাচ্চাকে সঙ্গ করে চলে গেলাম মহিলা সমিতিতে, দেখতে- মার্ক্স ইন সোহো / সোহোতে মার্কস।
যেহেতু অনুবাদটা আগেই পড়া ছিল তাই শুরুতে ভেবেছিলাম নির্দেশক নাটকে অনেক কুশীলব যোগ করবেন। সে সুযোগ থাকলেও মূল নাটকটিকে অবিকল রাখা হয়েছে বলেই মনে হয়েছে। পুরো নাটকটি দেখে কয়েকটি প্রশ্ন জেগেছে। যেগুলো একেবারেই আমার নিজের প্রশ্ন। যেমন, মার্ক্স নিজে মার্ক্সিস্ট নন সেইটা এতো জোরালোভাবে বলবার পেছনে হাওয়ার্ড জিনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়, কেন? আবার এদিকে, মঞ্চে নির্দেশক দারুণভাবে জেনির ছায়া শরীরকে দর্শকের সামনে নিয়ে এসেছেন। যা নাটকটিকে বিশেষত্ব দিয়েছে। কিন্তু ন্যারেট করবার সময় তাকে অতি মানবী করা হয়েছে কিনা ভাববার আছে। কখনো কখনো মনে হয়েছে জেনিকে মার্ক্সের চিন্তার একটা অস্পৃশ্য গণ্ডীতে আটকে ফেলা হয়েছে। সেখানে গতানুগতিক পুরুষতান্ত্রিক সমাজকেই দেখা যায়। যদিও এটা নাট্যকার করতেই পারেন। মার্ক্সকে আরো দৃঢ়ভাবে সাধারণের পাশ দাঁড় করানোর এটা উপায় হতে পারে। সর্বোপরি, বর্ণনায় মূল নাটকের বাইরে যেহেতু কোনো নতুন উপস্থাপন নেই তাই ব্যাপারটা অনুবাদ এবং নাটক নির্মাণে শেষমেষ গ্রহণীয় ব্যর্থতা হলেও অনন্য দৃষ্টান্ত।
- তবে, নাটক মঞ্চায়নে নির্দেশক তার অনন্যতা প্রমাণ করেছেন। পুরোটা সময় আপনার মনোযোগ মঞ্চে আটকে থাকবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। দীর্ঘসময় আমরা মার্ক্সরূপে যাকে দেখেছি সেই হুমায়ূন আজম রেওয়াজকে বাহবা না দিলেই নয়। তার ডায়লগ থ্রোয়িংয়ের দক্ষতা দর্শককে আটকে রেখেছে ঘটনার গল্পের পরের গল্পটি জানতে। আর মূকাভিনয় এবং নাচের নান্দনিক যৌথ আয়োজন উপস্থাপনায় জেনি চরিত্রটিকে বুকের গভীরে দাগ কেটে স্মরণীয় আর বরণীয় করে তুলেছে উম্মে হাবীবা। তাকে এক কথায় স্যালুট।
মজার ব্যাপার হলো বয়ানের সাথে শব্দের আরোহণ এবং অবরোহণ স্টোরি টেলিংয়ে– মঞ্চে নাটক নেই অথচ নাটকের আবির্ভাব ঘটিয়েছে। আর নাটকের বাস্তব পরিণতি দিয়েছে জেনি চরিত্রটি। যেটি দর্শককে ক্লাইমেক্সে ভুগিয়েছে (যদিও দর্শক ক্লাইমেক্স খোঁজে), হঠাৎ আবেগে তাড়িত করেছে আবার চিত্তকে নিমেষে নিবৃত করেছে এক গভীর শূন্যতায়। তো, একটা নাটকে আর কী চাও, হে বৎস? তবে আলো প্রক্ষেপণটা আরো ভালো হতে পারতো। (প্রথম শো দেখেছি বলে হয়তো এমনটা মনে হয়েছে, মাঝে মধ্যে আলো প্রক্ষেপণে একটু লেট-ফেট হইছে 🙂 )
কিন্তু বেকড্রপ স্ক্রিনে, সোহোর বিপরীতে ঢাকা তথা বাংলাদেশকে উপস্থাপনের ব্যাপারটা লক্ষ্যণীয়। বর্ণনার সাথে স্লাইড আপনাকে ভাবাবে, আসলে পরিবর্তনটা কোথায়? কোথাও কী ঘটেছে পরিবর্তন? মার্ক্স যে পুঁজিবাদের উপর এতো ক্ষ্যাপা সেই সামাজের কিংবা হাওয়ার্ড জিনের সময়কার পুঁজিবাদী সমাজের কিংবা সে সময়কার সাথে বর্তমান সময়কার পুঁজিবাদী আগ্রাসনের কোনো পরিবর্তন কী হয়েছে? এই কথাটুকু বলবার জন্যই এতো প্যাচাল। আবারো সেই বাদ প্রতিবাদ আর সম্বাদ!
লেখক: মেহেদী হাসান স্বাধীন