কবিতায় পরিশ্রমের ঘামরক্ত

তার সোনার হরিণ চাই! সেই সোনার হরিণ বুঝি থাকে কবিতায়! কবির বুক জুড়ে যে কল্প-বাস্তবতার মিশেল সেখানে যে বিশাল মাঠ সেই মাঠেই বুঝি খেলা করে- সোনার হরিণ; কবিতা।

কবি অমিতাভ পাল, কবিতাকে আগে থেকে সংজ্ঞায়ন না করে তার সঙ্গে দেখা করতে চান। তার ভাষায়- ‘কবিতার সঙ্গে দেখা হলে বোঝা যায়,  এটা কবিতা। আগে থেকে কবিতাকে সংজ্ঞার জালে আটকানোটা কঠিন।’

কবিতার সঙ্গে দেখা হতে হবে। আর কবি তো মানুষ। কবির জীবন মানুষের জীবন। পৃথিবীর সব পরিশ্রমী মানুষ কবির মতো। কবির কবিতাতে সেই পরিশ্রমের ঘামরক্ত থাকে। যেমন আকাশে উড়তে থাকা একটি চিলের ডানায় পরিশ্রম থাকে তেমনি। জলে ঘাঁই মারা মীনের বাঁক নেয়া দেহে যেমন পরিশ্রম থাকে তেমন।

কবি অমিতাভ পাল বলেন, কবি প্রচলিত জীবনের সংজ্ঞায় সন্দেহ করে। তাই সে জীবনের নতুন উপাদান খোঁজে। অন্যকেও স্বাদ দেয় সেই নতুন জীবনের।

তাই বোকা জানতে চেয়েছে, তবে….. ঘুরে ফিরে কি একই জিনিস বারবার আসে?

অমিতাভ পাল যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করেন আবার কবিতা দিয়ে জোড়া লাগান। বোকা গোগ্রাসে গিলবার চেষ্টা করে। তারপর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে শুনতে থাকে কবির বিস্ময়মাখা স্বরে কবির কবিতাখানি।

আমি আজ যা বলছি, তা হয়তো বহু আগেই

কেউ বলে ফেলেছে বা বহুদিন পরে কেউ বলবে

বলবার কথা আসলে একটাই

অমিতাভ পাল

জন্মান্ধ প্রকাশিত কবির কবিতারা: তিমির হননের গান ২০১৫, বলবার কথা, যুদ্ধে জেতার তরিকা

তিমির হননের গান ২০১৫

আমার সমস্ত রোদ বিক্রি করেছি আমি অফিসের কাছে
আর যতটুকু আলো আমার জীবনে বাকি আছে
তাদেরও সিংহভাগ চলে যায় ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎবিল মেটানোর কাজে
বাকি থাকে অন্ধকার- ঘুমহীন রাত্রির ভাঁজে ভাঁজে
বিষণ্ন প্রেমের স্রোতে ঢুকে গেছে শিশুদের দল
খাটের ক্ষেত্রফলে শব্দে ভরা কারখানার মতো
নতুন পণ্য আসে নতুন লাভের আশা নিয়ে
বাণিজ্য- কাহার তুই বল
ডুবে যাচ্ছি অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি- ধরো
হে সূর্য বাড়াও তোমার রশ্মির আঙুল
শতখণ্ডে ছড়িয়ে পড়া আমাকে আবার জড়ো করো
ফুটাও আমার মনে জীবনের বিষভরা হুল

 

বলবার কথা

আমি আজ যা বলছি, তা হয়তো বহু আগেই
কেউ বলে ফেলেছে বা বহুদিন পরে কেউ বলবে
বলবার কথা আসলে একটাই

অনৈতিক কাজ করা লোকটার দিকে যেই তোলা হলো অভিযোগের আঙুল
অমনি সে পাল্টা আঙুল তুলে আরো জোর গলায় জানিয়ে দিল
অভিযোগকারীই আসলে অভিযুক্ত
রাস্তাঘাটে এই ঘটনা দেখতে দেখতে আমি ধরতেই পারিনা
সমস্যার মূলে কে
ফলে মনে হয় পৃথিবীটা এখন পূণ্যবানে ভরে গেছে
আর সমস্যাগুলি কারো কাছে আশ্রয় না পেয়ে
ভেসে উঠছে যেখানে সেখানে
প্রতিটা যুদ্ধে জিততে চাইছে প্রত্যেকটা মানুষ

***লেখাটি জন্মান্ধ ব্লগস্পটে ১০ মে ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়। কোনো ধরনের পরিবর্তন (কর্তন সংযোজন) ছাড়াই লেখাটি বোকাবিডিতে প্রকাশ করা হলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top