অনিলের কবিতা, অ-কবিতা
Reading Time: 8 minutesবোকা নীরবতায় কোলাহল খোঁজে, প্রাণ খোঁজে! যে সহজ পথে বোকা চলে সে পথে নীরবতার শব্দগুলো সুতীব্র আস্ফালন করে। মেঘ যেমন গুড়ুম গুড়ুম ডাকে!
কবি অনিল সেন সেই নীরবতার শব্দ কী মধুর ব্যাঞ্জনায় লিখে! বোকা অবাক বিস্ময়ে সে কথা ভাবে! এই যেমন- “যেদিন স্ত্রীর চোখে দেখি গহীন ভিতর // সন্তানের মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি // খোলা হাওয়ায় ধানক্ষেতের দোল // সেদিন বিস্ময়ে সংসার ছেড়েছি।” কিংবা, “ভাবতে থাকি // ভাবতে-ভাবতে ভাবতে-ভাবতে দেখা হয়ে যায় // ভাবনার শুরুতে পৌঁছে গেছি…”
বোকা খুব আগ্রহ নিয়ে কবি অনিল সেনের কাছে কবিতা চেয়েছে। কবির মধ্যে তার চিরচেনা স্বভাব-সুলভ আত্মীয়তায়; বোকা টের পায় প্রাণের সাথে প্রাণের টান!
অনিল সেন বলেন, তার কবিতা, অ-কবিতা!
বোকা বলে, ও…, মানে অ- অনিলের কবিতা! কবিতা চাই কবি, শিরোনাম পেয়ে গেছি- “অনিলের কবিতা, অ-কবিতা।”
এরপর হাসিমুখে কবি বোকাকে কবিতা দিলেন। বোকা তার কবিতার আলোর মতোই জ্বল জ্বলে হয়ে উঠলো।
প্রিয়, বো-কাপা-ঠক; কবি অনিল সেনের কবিতাগুলো পড়ে দেখুন; আমাদের চিন্তার বাইরে নয়, আমাদের দেখার বাইরে নয় অথচ কী নিনাদ প্রতিটি শব্দের, প্রতিটি শব্দে কী দারুণ গভীরতার ছোঁয়া। কবি অনিল সেনকে বোকার তরফ থেকে শুভেচ্ছা আর শুভ কামনা!
আলোর মতো জ্বলে যাই
অনিল সেন
সবকিছু ভেসে যায় অগ্নিস্রোতে
পোড়ে না কিছুই তার
জল খোয়া যায় বাতাসে
সুরতালে জগৎ নাচে
আমরা আলোর মতো
জ্বলে যাই
ক্ষণিককে ভালোবেসে।
বিবাগি
অনিল সেন
আমি সংসার ছেড়েছি বহু আগে
সুখদেব যেদিন উদমদেহে কৃষ্ণপ্রেমে ঘর ছাড়ে
বুদ্ধদেব উস্কে দিয়ে বলে গেল
তোমরা দেখে নিও!
সংসার ছেড়েছি জন্মক্ষণে
মায়ের আনন্দাশ্রু যেদিন টপটপ পড়ে আঁচলে
বৃষ্টিধারার ফাঁক দিয়ে অনেক দূর দেখি
ধ্বনিহীন বীণার কষ্টে।
একদিন গুরুদেব জানাল; সংসার তো করতে হবে
তবে সং’টাকে সার করিস না
আমি সাঁতার কাটি হংসরূপে,
দেবতুল্য পিতা মুসকি হেসে বলে গেল
শুধু কাজ করলে হবে না বাপু, নিজের প্রতি
খেয়াল রাখতে হবে তো!
সেদিন থেকে ডুবে আছি আপনাতে
আমি সংসার ছেড়েছি বহু আগে।
যেদিন স্ত্রীর চোখে দেখি গহীন ভিতর
সন্তানের মধ্যে নিজের প্রতিচ্ছবি
খোলা হাওয়ায় ধানক্ষেতের দোল
সেদিন বিস্ময়ে সংসার ছেড়েছি।
দেখেছি শিকাগো ভাষণে
দীশাহীন পাশ্চাত্যের ক্রন্দনরোল
বিশ্বমঞ্চে যেদিন উচ্চারিত হয়-
‘উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধিত’
আজও জেগে আছি দুর্গম পথে
আমি সংসার ছেড়েছি বহু আগে।
Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.
ভাবতে ভাবতে বহুদূর
অনিল সেন
ভাবতে ভাবতে বহুদূর চলে গেছি
আলোর বিন্দু শেষে অন্ধকার -সেখান থেকে
ফিরতে হলে জন্ম লাগে কয়েকবার
ভাবতে থাকি
ভাবতে-ভাবতে ভাবতে -ভাবতে দেখা হয়ে যায়
ভাবনার শুরুতে পৌঁছে গেছি
জন্মমৃত্যু হয়েছে অসংখ্য ভাবনার
বার বার ঘুরে ফিরে শুরু আর
শেষের ভাবনায় বাঁধা
নির্জন প্রান্তের ঠিকানা
একপ্রান্তে ভরপুর অন্যপ্রান্তে শুণ্যতা
দুই দিকে ভাবনা, দুই দিকেই পার
শুধু আসা-যাওয়া, সংশয়
বহুজন্ম লাগে
ভাবতে ভাবতে বহুজন্মই চলে যায়।
অন্য ভাবনা
অনিল সেন
ভয় নেই
আমার কবিতা তোমায়
ভাবাবেনা।
তুমি তোমার কবিতা লিখ
আমি আমার কথা বলি-
তুমি প্রতিহিংসায় মত্ত
থেকো
আমি নতুন ভোরের স্বপ্ন
দেখি।
তুমি নীতিবাক্য দিয়ে ঢেকে
রাখ সত্য
আমি মিথ্যার সাথে লড়াই
করি নিত্য।
তুমি মতবাদ দিয়ে নিজেকে
আড়াল করো
আমি কর্মে নিজেকে আবিষ্কার
করি।
তুমি ধর্ম দিয়ে কেড়ে নাও
বাক স্বাধীনতা
আমি লালন করি মানুষের
অধিকার।
তুমি আমার ধ্বংসের ছক
আঁকো
আমি রুদ্র ভৈরবে গান
বাঁধি
প্রলয়োল্লাসে গেয়ে উঠি
মাভৈঃ মাভৈঃ ।
ঐপার
অনিল সেন
নড়বড়ে সাঁকো পার হয়ে
একদিন ঐপারে যাব
সেখানে স্বজনরা থাকে
চলে যাওয়ার বহুদিন হয়ে গেল
এপারে আসে না আর।
স্মৃতি আমাকে অস্থির করে তোলে
জানা-শোনা মানুষগুলো কোথায় চলে গেল?
একসময় বুকে জড়িয়ে বলতো
কোথাও যাবে না!
কিন্তু, এখন ফিরেও তাকায় না
মুখগুলো অনেকটা অস্পষ্ট হয়ে গেছে
কী নিদারুণ কষ্ট ।
তবুও দেখার ইচ্ছে প্রবল হয়
যাকনা দীর্ঘ সময়, হোক ক্লান্ত শরীর
শুকিয়ে যায় যাক অশ্রু
সাঁকো পার হয়ে ঐপারে যাবো
আমাকে যেতেই হবে একদিন।
ক্ষমা করো বিদ্রোহী কবি
তোমাকে নিয়ে হবার কথা ছিল না-
এমন নিষ্ঠুর ছলনাবাজি
কথা ছিল বোধন ঘটবে চেতনার বেদিতে
মানুষ মানুষের জন্যে ; মিছিল হবে ক্যাম্পাসে
তা আজও মেলেনি।
ক্ষমা করো বিদ্রোহী কবি
ভাগ হয়ে গেছে সবকিছু
প্রতিহিংসার হানাহানিতে মাতাল
এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।
ক্ষমা করো বিদ্রোহী কবি
কথা ছিল ভাগের ভাগাড়ে থাকবে না তুমি
দুর্গতি আর হবে না কখনো
তোমার নয়নে নয়ন রেখে
আমরা আবার মানুষ হয়ে উঠি।
ক্ষমা করো বিদ্রোহী কবি
অনিল সেন
One thought on “অনিলের কবিতা, অ-কবিতা”