সিভি লিখবো না বানাবো?

CV / সিভি শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। অথচ এটি লিখতে আমাদের এতো আড়ষ্টতা! এর কারণ আমাদের কয়েকটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের অভাব! যেগুলো আমরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করতে পারি নাই! এর সহজ মানে, আপনার জ্ঞান কাণ্ডের সাথে কাণ্ডজ্ঞানের অভাব এই না লিখতে পারার প্রধান অন্তরায়। 
সিভি নিয়ে বলছি এজন্যে যে, এতো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরেও আমরা নিজেকে চিনতে পারছি না! এটা কেবল আপনার একার ব্যার্থতা না- সামগ্রিক শিক্ষা এবং প্রতিষ্ঠানেরও ব্যার্থতা! 
আর এই ব্যার্থতাকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় বদমায়েশ সিভি লিখার নাম করে বিভিন্ন কোর্সের নাম করে আপনার পকেট কাটছে! আপনাকে কানুন শিখাচ্ছে নিয়ম শিখাচ্ছে!

তাই বোকা সমাজের কাছে সহজে সিভি লিখবার কৌশল বাতলে দিই।

  • নিজের নামটি শুদ্ধ করে লিখুন, সহজে আপনার সাথে যোগাযোগের মাধ্যমটি যুক্ত করুন।
  • কয়েকটি সহজ লাইনে আপনি মানুষটা আসলে কী? সেই কথাগুলো লিখুন। ধরুন আপনি একজন চোর, ছ্যাচড়া। কিংবা পুলিশ কিংবা ডাক্তার কিংবা শিক্ষক কিংবা বেকার! আপনার এই পরিচয় বুঝতে সহজ করে আস্থার সাথে কয়েকটি লাইন লিখুন।
  • এইবার আপনি নিজেকে জানাতে বোঝাতে যেসব কথা লিখেছেন; তার বিপরীতে কী কী অভিজ্ঞতা আছে সেই কথাগুলো সংক্ষেপে লিখুন। অবশ্যই প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ এবং খুব সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাগুলো আগে লিখুন।
  • এরপর আপনি যে কাজগুলো করতে খুব আগ্রহী সেগুলো লিখুন। যে কাজগুলোয় আপনি নিজের ব্যাপারে খুবই আস্থাবান পারদর্শী সেসবের নাম লিখুন।
  • এইবার এই যে এতো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, এতো সব কাজে পারদর্শী তার পেছনে আপনি যেসব জ্ঞান অর্জন করেছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, সার্টিফিকেট পেয়েছেন তার কথা লিখুন। অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিংবা বিশেষ পরিচিত বা নামকরা প্রতিষ্ঠানের কথা আগে লিখুন।
  • এই যে এতো সব কথা লিখেছেন, তার সবকিছু যে সত্য, গ্যারান্টি কী? তাই লেখায় যে কোনো অতিরঞ্জন নেই নিজে তার স্বীকারোক্তি দিন। এবং তারিখসহ স্বাক্ষর প্রদান করুন।
  • অবশ্যই উপরে ডানপাশে সাম্প্রতিক তোলা একটি পাসপোর্ট সাইজ ফটোগ্রাফ যোগ করতে ভুলবেন না।

ব্যস, আপনার কাজ শেষ; ৭টি ধাপ অনুসরণ করেই আপনি নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, বোকা সমাজে; এর বাইরে চালাক সমাজ আপনাকে আরো অনেক কিছু লিখতে বলবে। কেন লিখতে বলছে, জানতে চেয়ে চালাক সমাজকে প্রশ্ন করুন; যদি মনোপুত উত্তর না দিতে পারে ঠাডায় থাবড়া বসান।

এইবার আসুন যারা সিভিতে টেম্পলেট চোদায়ে বেড়ান তাদের ব্যাপারে কথা কই। সাদা কাগজে সহজে পড়া যায় এমন করে সহজ লেখায় সহজ উপস্থাপনই সবচেয়ে সুন্দর। আলাদা টেম্পলেট-এর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক গ্রামার নাই। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও নাই। যারা এইসব করে বেড়ান তারা আসলে নিজের ব্যাপারে অতিরঞ্জন করেন। এদের থেকে সাবধান থাকুন। সাধারণত দেখা যায় যারা সৃজনশীল মাধ্যমগুলোয় কাজ করেন তারা একটা নতুন ট্রেন্ড চালু করেছেন। এই যেমন, আপনি হয়তো গ্রাফিক ডিজাইনার। কোনো প্রতিষ্ঠান আপনার কাছে কাজের পোর্টফোলিও চাইতে পারে। কিংবা আপনি এনিমেটর, আপনার কাছে কাজের রিল চাইতে পারে।

এই ক্ষেত্রে এইসব আগ্রাসী প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে আপনি একধাপ এগিয়ে থাকুন। উপরের টপিকগুলোর সাথে একটি বাড়তি টপিক যোগ করুন। নাম সংযুক্তি। সংযুক্তিতে কী থাকবে? সংযুক্তিতে আপনি যাস্ট ওয়েব লিংক যোগ করবেন- ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, লিংকডইন কিংবা নিজের ওয়েব সাইট; কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট যেখানে আপনার কাজের নমুনা সংরক্ষিত আছে।

যে কাজগুলো করবেন না-

সিভি লিখতে গিয়ে রেফারেন্স কতোটা জরুরী?

রিকমেন্ডেশন ছাড়া কারো রেফারেন্স আপনার সিভিতে যোগ করবেন না; ভালো হয় কোনো রেফারেন্স যোগ না করা, তদবিরের চাকরি ছাড়া রেফারেন্স যোগ করাটা নেহায়েতই চালাকি। এই চালাকি করবার কোনো মানে নাই। মনে রাখবেন আপনি হয়তো একজন সচিবের রেফারেন্স দিলেন যিনি হয়তো আপনাকে চিনেই না। আপনি পড়লেন এক প্রতিষ্ঠানে আর রেফারেন্স দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপকের! ব্যাপারটা কেবল চালাকিই নয় খুব নোংরামিও বটে।

সিভিতে একই কথা বারবার লিখবেন না। আপনার সিভিতে আপনার আব্বার পরিচয় দিয়ে কোনো জ্ঞানকাণ্ডের পরিচয় দেয়া হয় না; মামার পরিচয় লিখেও কোনো কাজ হয় না। মনে রাখবেন, একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য সিভিতে যোগ করবেন না; যেমন- জন্ম তারিখ, বৈবাহিক অবস্থান, স্ত্রী/স্বামীর নাম, বাবা-মায়ের নাম, ছেলে-মেয়েদের নাম; কোনো আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ইত্যাদি; এসবের সাথে আপনার কাজরে পারদর্শীতা অভিজ্ঞতার কোনো সম্পর্ক নেই।

ধরি, আপনি কোথাও চাকরির আবেদন করেছেন; সিভি দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠান আপনাকে ডেকেছে; আপনাকে পছন্দ হয়েছে; আপনি যোগ দিয়েছেন। আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, জন্ম সনদ, ব্লাডগ্রুপ, বৈবাহিক অবস্থাসহ নানান পার্সোনাল বিষয় তখন দিয়ে থাকেন; যেগুলো ওই প্রতিষ্ঠান আপনার নামে আলাদা একটি ফাইলে প্রশাসনিকভাবে সংরক্ষণ করে থাকে। ঠিকাছে।

এইবার ধরে নেই আপনি ডাক পেয়েছেন। কিন্তু চাকরি হয়নি। কিংবা আপনি ডাক পাননি। তাহলে এসব জমা দিলেন কেন? আপনার দেয়া তথ্যগুলো কোনো ক্রাইমে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, কে জানে?

যারা এনজিও আইএনজিও’র মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান; তাদের মনে রাখতে হবে, উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার সিভি লিখবার জন্য একটি আলাদা ফর্মেট প্রদান করতে পারে; সেসব জায়গাও দেখবেন বোকার দেয়া নমুনার বাইরে আজাইরা চালাকি নাই।

আবার সরকারি চাকরির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে আপনাকে লিখতে হতে পারে। ব্যাংকগুলোয়ও দেখবেন একদম ফর্মেটিভ এবং কালেক্টিভ ওয়েতে আপনার তথ্যগুলো একোমডেট করছে। অর্থাৎ বাড়তি কথা আসলে কেউই পছন্দ করে না। আপনার একজেক্ট তথ্যটাই আপনার একজেক্ট বিজ্ঞাপন

বোকা জানতে চায়, সিভিতে অযথাই মানুষকে আজাইরা কথা পড়ায়ে কী লাভ? আজাইরা কথা লিখা বন্ধ করে নিজের সময় বাঁচান অন্যের সময়টাও বাঁচান। এটাই মঙ্গল।

পুনঃশ্চ: প্রিয় বো-কাপা-ঠক, আপনাদের যাদের মনে সিভি নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে, তারা কমেন্ট বক্সে লিখে ফেলুন; বোকাবেদক উত্তর দেয়ার এবং সমাধান বাতলে দেয়ার চেষ্টা করবে; আর যদি কারো নমুন সিভির প্রয়োজন হয়, তবে বোকার স্বর্গে দেয়া ইমেইল ঠিকানায় আপনার আগ্রহের কথা জানান; বোকাবেদক নিজের সিভির কপি আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দিবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top