শরৎ উৎসব ২০২৫। বাংলা সাহিত্যের পাঠকসমাজে শরৎ মানেই এক স্নিগ্ধতা, এক নরম আলোয় ভরা নিঃশব্দ উৎসব। সেই ঋতুরই আবেশে ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় প্রকাশিত হলো ‘বোকা বিডি ডট কম’-এর শরৎ নিয়ে বিশেষ সংখ্যা—‘শরৎ উৎসব ২০২৫’।
সংখ্যাটিতে স্থান পেয়েছে ৩২ জন লেখক, কবি ও শিল্পীর সৃজনশীল লেখা, আর প্রচ্ছদ ও ভেতরের অলঙ্করণে রঙ তুলেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ তাঁর অনন্য পেইন্টিং ‘শরৎ’ দিয়ে।
Table of Contents
Toggle“বোকা বিশেষ ম্যাগাজিন”
শরৎ উৎসব ২০২৫: সম্পাদকীয় ভাবনা
সম্পাদক মেহেদী স্বাধীন তাঁর সম্পাদকীয়তে লিখেছেন—
“শরৎ—বাংলা ঋতুচক্রের এক নিঃশব্দ দীপ্তি। আকাশজোড়া সাদা মেঘের ভেলা যেন ভাসমান স্বপ্নের মতো ছড়িয়ে পড়ে মনের পর্দায়… এই সংখ্যায় আমরা খুঁজেছি রঙ নয়, রোদের পরম সূক্ষ্ম আলো—মানুষের ভেতরের আলো-ছায়ার খেলা, প্রেম ও বিষাদের মিশ্র সুর।”
‘বোকা বিডি ডট কম’-এর ‘শরৎ উৎসব ২০২৫’ আসলে এক ঋতুকে উপলক্ষ করে মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য ও সংবেদনশীলতাকে পুনরাবিষ্কার করার প্রয়াস। এই সময়টিতে যখন চারপাশের জীবন ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে উঠছে, তখন ‘বোকা’ চেয়েছে সাহিত্য, শিল্প আর ভাবনার ভেতর দিয়ে ফিরে যেতে মানুষের মর্মে—সেই জায়গায়, যেখানে শব্দের নরম ছোঁয়া এখনো হৃদয় ছুঁতে পারে। এই সংখ্যাটি তাই কেবল মৌসুমি আয়োজন নয়; বরং এটি এক মানসিক ঋতু, এক শান্ত অথচ দীপ্ত সৃজনচর্চা, যেখানে শরতের প্রকৃতি হয়ে উঠেছে আত্মার প্রতীক—মেঘ, রোদ, কাশফুল কিংবা নৈঃশব্দ্য—সব মিলিয়ে এক জীবনদর্শন।
‘বোকা’র উদ্দেশ্য ছিল এই সংখ্যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যে সাহিত্য কেবল পাঠের বিষয় নয়, এটি এক জীবন-অনুশীলন। এখানে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, আর্ট—সবই একে অপরের সঙ্গে সংলাপে যুক্ত হয়ে গড়ে তুলেছে এক ‘সৃজন-সমবায়’, যেখানে তরুণ লেখকের স্বপ্ন, প্রৌঢ় কলমের অভিজ্ঞতা এবং পাঠকের অনুভব একসূত্রে বাঁধা। ‘বোকা’ বিশ্বাস করে, এমন যৌথ সৃজনই আমাদের সময়ের ক্লান্তির ভেতর নতুন আলো জ্বালতে পারে—যেমন শরতের রোদ মৃদু অথচ অনির্বাণ।
তিনি আরও বলেন, “‘বোকা’র শরৎ উৎসব কোনো ক্যালেন্ডারের আয়োজন নয়, এটি এক মানসিক ঋতু—যেখানে শব্দগুলো ভাসে মেঘের মতো, আর অর্থগুলো নেমে আসে নরম রোদের মতো।”
শরৎ উৎসব ২০২৫: লেখক ও লেখা
‘শরৎ উৎসব ২০২৫’ সংখ্যায় স্থান পেয়েছে আধুনিক ও প্রথাগত দুই ধারার লেখাই। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, স্মৃতিকথা—সব মিলিয়ে এক বহুরৈখিক শরৎচিত্র গড়ে উঠেছে এই সংখ্যায়।
প্রকাশিত লেখাগুলো—
ধ্রুব এষ – শরৎ (পেইন্টিং), কাবেরী গায়েন – আগমনী গানে রোদন ছিলো, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য – কুসুমের দিকে, প্রণব আচার্য্য – অন্য দিনের গান, মাহমুদুল হাসনাত – মৌরি ফুলের কথা ভাবতে পারো, সাকিরা পারভীন – কৃষ্ণপক্ষই তারে সয়, খালেদ হোসাইন – অথচ শরৎকালে কোনো এক প্রসন্ন নিশিথে, জুনান নাশিত – প্রশ্নগুলো, তুষার আব্দুল্লাহ – তোমার শারদ এলো, হোসনে আরা জেমী – নারীদের নাচ!, সাবেরা তাবাসসুম – মানচিত্রের দক্ষিণে, অনিল সেন – প্রিয়তম চেয়ে দেখ, আসমা চৌধুরী – সাদা মেঘ পেরেক, দিলার হাফিজ – খণ্ড–ৎ যাবে না ছেড়ে, তুহিন তৌহিদ – শরৎ লাল ডুমুর, শিপ্রা দেবনাথ – ছাতিমের জন্য, এহসানুল আজিজ বাবু – চিরন্তন শরৎ : ভাদ্র ও আশ্বিনের প্রেমগাথা, প্রবীর কুমার রথ – সাজো সাজো রব, চৌধুরী ফেরদৌস – শরতের পাক–খাওয়া পোড়া কাশফুল, লাবণ্য লিপি – আমি বৃষ্টি ভালোবাসি, হাসনাইন হীরা – কাশ কাফেলায়, সুরাইয়া হেনা – এই শরতে তোমায় দিলেম, পিয়াস মজিদ – আমার শারদীয়া, শুভঙ্কর দাশ শুভ – চির পুরাতন নতুন শিশু : শিশুদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় জরুরি, নাসরীন জাহান – বেদনায় উড়ি, পরবাসে, তারেক রেজা – কাশফুল–শ্বেতশুভ্র ধাম / মধ্যরাত–প্রজ্ঞাপ্রসূত ভালোবাসা / কাশবন–শ্বেতশুভ্র রোদ, স্নিগ্ধা বাউল – ন্যাবাকে স্নিগ্ধা বাউলের চিঠি, লুৎফর রহমান রিটন – শরতের নীলাকাশ রবীন্দ্র–সরণি, তারেক মেহেদী – ধাবমান ১৫ সেকেন্ড, জোবাইদা নাসরীন – ইংরেজি সাহিত্যে শরৎ, ফয়সল নোই – ভ্রমণ, মনজুরুল হক – আজ শরতের ভোরবেলায়, মেহেদী স্বাধীন – শরৎ তোমাকে।
পেছনের গল্প
সম্পাদক মেহেদী স্বাধীন জানিয়েছেন, “স্বল্প সময়ের ভাবনায় সংখ্যাটি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরিচিত অনেক লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, আবার অনেকেই সময়ের সীমাবদ্ধতায় লেখা পাঠাতে পারেননি।”
তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন—
“এই সংখ্যাটি প্রকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন আমার প্রিয় কবি সাকিরা পারভীন সোমা। তিনি নানান জনকে কল দিয়ে লেখা সংগ্রহ, পরিকল্পনা সাজানো থেকে শুরু করে প্রকাশ পর্যন্ত অফুরান উদ্যোমে সহযোগিতা করেছেন।”
‘বোকা’র এই শরৎ উৎসব শুধু একটি সাহিত্য সংখ্যা নয়; এটি এক ঋতুর মায়ায় মোড়ানো সৃজনযাত্রা—যেখানে কবিতা, ছবি ও ভাবনার মিশেলে ধরা দিয়েছে বাংলার শরতের রূপ, গন্ধ ও হৃদয়।
পাঠকেরা এখনই পড়তে পারবেন ‘শরৎ উৎসব ২০২৫’ সংখ্যাটি— ক্লিক করুন শরৎ উৎসব ২০২৫