বাংলাদেশের মঞ্চনাট্যের জগতে অলোক বসু এক অনন্য নাম।
নাট্যকার, নির্দেশক, কবি, কপিরাইটার—সবকিছু মিলিয়ে তিনি যেন এক অবিরাম অনুসন্ধানের মানুষ।
কখনো ‘বান্দরের কিসসা’-র প্রতিবাদী স্বর, কখনো ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’-এর প্রেমময় মায়া, কখনো আবার ‘কমলা রঙের বোধ’-এর দার্শনিক নির্জনতা—সব জায়গাতেই ছড়িয়ে আছে তাঁর নিজের জীবনের গন্ধ।
কিন্তু এই মানুষটিকে চেনা মানেই কেবল তাঁর কাজ জানা নয়; চেনা মানে এক অন্তর্মুখী আত্মপ্রবণতার সঙ্গে দেখা করা, যিনি গাম্ভীর্যের আবরণে লুকিয়ে রাখেন এক গভীর মানবিক হাসি।
বোকার উনিশকুড়ি বিভাগের এই সাক্ষাৎকারে অলোক বসু খোলামেলা কথা বলেছেন তাঁর মঞ্চজীবন, কবিতা, জীবনের দর্শন ও না-পাওয়া স্বপ্ন নিয়ে—যেখানে প্রতিটি উত্তরই যেন একেকটি নাটকের সংলাপ, মঞ্চের আলোছায়ায় বোনা এক জীবন্ত আত্মকথন।
পাঠক, অলোক বসু’র এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- মেহেদী স্বাধীন।
বোকার উনিশকুড়ি বিভাগে আপনাকে স্বাগতম। বোকা আপনাকে উনিশকুড়ি প্রশ্ন করতে চায়। পাঠকদের অনেকেই বলে থাকেন বোকা কাঠখোট্টা প্রশ্ন করে। উত্তরগুলো কাঠখোট্টা টাইপেরই হয়ে থাকে। অনেকে ব্যাপারটাকে খুব ইন্টারেস্টিং মনে করেন। প্রশ্নগুলো কখনো বোকা বোকা। তবুও বোকা প্রশ্ন করতে চায়। পাঠক হিসাবে ঋদ্ধ হতে চায়।
আপনার জন্য প্রশ্ন-
১.
Table of Contents
Toggleঅলোক বসু মানুষটা আসলে কেমন? যদি নিজেকে এক কথায় ব্যাখ্যা করতে হয়—কীভাবে দেখবেন নিজেকে?
অলোক বসু: অলোক বসু লোকটা অসম্ভব ভালো একজন মানুষ। হাঃ হাঃ হাঃ।
হতেই পারে না।
লোকটা ভালো না।
প্রথম দেখাতে লোকজনের পারসেপশনে এরকম ভাবনা আসটাই স্বাভাবিক। কারণ, আমার চেহারা মোবারকের মধ্যে একটা বদখতভাব আছে। তবে আমার মনে হয় অলোক বসু লোকটা মানুষ হিসেবে একেবারে মন্দ নয়। সত্যি বলতে কী ভালোমন্দ মিলিয়েই মানুষ। আমি তার বাইরে যাই ক্যামনে?
২.
কবিতা, থিয়েটার, টেলিভিশন আর কপিরাইটিং—সব ক্ষেত্রেই আপনাকে দেখি। এর মধ্যে কোনটা আপনার সবচেয়ে প্রিয়? কোন কাজে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পান?
অলোক বসু: প্রশ্নের শেষ অংশের উত্তর আগে দিই। কোন কাজে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই? এক একটা কাজে এক এক রকম আনন্দ পাই।
কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে আনন্দ পাই।
কখন গাছের ডালে ডালে পাখিদের ছোটাছুটিতে আনন্দ পাই।
আমার বাসার বারান্দায় বসে ধূমপান করতে করতে সামান্য হাওয়ায় পাশের নিমগাছের পাতাদের কাঁপনি দেখে আনন্দ পাই।
কোনোটার আনন্দ কোনোটার চেয়ে কম নয়।
আগেতো ফেইসবুকে মনের মতো একটা পোস্ট দিয়েও তুমুল আনন্দ পেতাম। এখন বাকস্বাধীনতার(!) যুগে সে আনন্দ থেকে নিজেই নিজেকে বঞ্চিত করে চলেছি।
এবার আসি প্রথম অংশের উত্তরে। কবিতা, থিয়েটার, টেলিভিশন, কপিরাইটিং—এ চারটি কাজই আমার খুব প্রিয়।
তবে আমার কাছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও প্রিয় কাজ থিয়েটার। থিয়েটারটা হলো রোজকার ভাত খাবারের মতো। খেতেই হয়। কবিতাটা হলো নান-কাবারের মতো। মাঝে মাঝে খেলে ভালো লাগে। রুচিতে পরিবর্তন আসে। টেলিভিশন হলো বিরানির মতো। বেশি খাওয়া যায় না। হঠাৎ হঠাৎ খাওয়া যায়। খাওয়া কম হয় কারণ ডাক পড়ে কম।
আর কপিরাইটিংটা হলো বিকেলে নাস্তায় ভাজাপোড়া খাওয়ার মতো। খেতে ভালোই লাগে, কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়। কিছু কি বোঝাতে পারলাম? সোজাকথায় এই চারটা মাধ্যমের মাঝে থিয়েটারই আমার সবচেয়ে প্রিয় মাধ্যম।










৩.
এত কিছু করার পরও আপনি আড়ালে থাকেন—এটা কি ইচ্ছাকৃত, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
অলোক বসু: খুব যে প্ল্যান করে আড়ালে থাকি, তা নয়। আসলে আমি সবসময়ই পিছনে পড়ে যাওয়া মানুষ। গুঁতোগুঁতি করে সামনে আগাতে পারি না। কেমন যেন রুচিতেও বাঁধে গুঁতোগুঁতি করে সামনে যেতে। তাই আড়ালে পড়ে থাকি।
৪.
থিয়েটারে আপনার যাত্রা শুরুটা কেমন ছিল? কীভাবে মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হলেন?
অলোক বসু: এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে আমার খুব ভালো লাগে।
আমার শিশুকালে দেখেছি, আমাদের বাড়িতে অনেক নাটকের বই। আমাদের গ্রামে বার্ষিক নাটক (যাত্রা পালা বলাই ভালো, তবে টেক্সটগুলো ক্লাসিক ছিলো। ডিএল রায়, ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের লেখা) হতো, তাতে আমার দাদু, বাবা-কাকাদের অগ্রণী ভূমিকা থাকতো।
আমার এক কাকা ছিলো আমার সমবয়সী। ছ’মাসের বড় মাত্র। তো যখন বার্ষিক নাটকে শিশুশিল্পীর দরকার হতো, আমাদের দুজনেরই ডাক পড়তো। প্রতিবার আমার কাকাই সুযোগ পেতো। সে ভালো অভিনয় পারতো। আমি বাদ পড়ে যেতাম। এ নিয়ে আমি খুব হতাশ থাকতাম।
তো একবার বার্ষিক নাটক দেখার পরদিন আমি কাগজ কলম নিয়ে বসে গেলাম। সে সময়টায় কাগজকলম কেনা একটু ব্যয়বহুলই ছিলো। আমরা বাইন্ডবুক খাতায় প্রথমে পেন্সিল দিয়ে লিখতাম। পরে তার ওপরে ঝর্নাকলম দিয়ে লিখতাম। এতে কাগজের সাশ্রয় হতো। আমি পেন্সিলে লেখা খাতায় ঝর্নাকলম দিয়ে লিখে ফেললাম প্রথম নাটক।
এটা ছিলো আগের রাতে দেখা নাটকটির সংক্ষিপ্ত ঘটনা, যা আমি আমার মতো করে, অর্থাৎ একজন শিশুর মতো করে লেখা। উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে অভিনয় করতেই হবে। বড়দের নাটকে বারবার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হচ্ছিলাম, তখন মনে হয়েছিলো নিজে লিখে নিজেই অভিনয় করি না কেনো?
আমরা ছোটরা অনেকদিন ধরে মহড়া করে সেই নাটকটা করেছিলাম এক সন্ধ্যায়। সেই আমার প্রথম নাটক লেখা, প্রথম অভিনয় করা। তখন আমি ক্লাস থ্রি বা ফোরে পড়ি। এটা অবশ্য শিশুতোষ ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নাটকের সাথে সিরিয়াসলি যুক্ত হয়ে পড়লাম। আরণ্যক নাট্যদলে যুক্ত হলাম।
৫.
মঞ্চজীবনের সবচেয়ে মনে রাখার মতো মুহূর্তটা কোনটা বলবেন?
অলোক বসু: অনেক স্মরণীয় ও মজার ঘটনা আছে। আমার নাট্য অভিযাত্রার কথা লিখেছি “কানাকড়ির মঞ্চজীবন’-এ। একটাই যেহেতু বলা যাবে, বলে ফেলি। ২০১১ সালে কক্সবাজারে গেছি পথনাটকের কর্মশালা করাতে। পাঁচ দিনের কর্মশালা। একক প্রশিক্ষক আমি। প্রশিক্ষণার্থী স্থানীয় বিভিন্ন নাটকের দলের কর্মীবৃন্দ।
কক্সবাজার কালচারাল কমপ্লেক্সের একটি গেস্ট রুমে আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মশালাও সেখানেই হবে। সারারাত বাসভ্রমণ করে এসে ক্লান্ত আমি। বিকেলেই শুরু হবে কর্মশালার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। তাই ভাবলাম কয়েকঘন্টা ঘুমিয়ে নিতে পারলে মন্দ হয় না। শুয়ে পড়লাম খাটে কিন্তু গরমে ঘুম আসছিলো না। এপাশ ও ওপাশ করছি।
লক্ষ্য করলাম একটি ছেলে বার বার জানালার বাইরে থেকে উঁকি মেরে আমাকে দেখার চেষ্টা করছে। ভাবলাম ছেলেটা একসময় চলে যাবে। না যায়নি সে। একটু পরপরই উঁকি দিচ্ছে। কেমন সন্দেহজনক মনে হলো আমার কাছে। আমি উঠি গিয়ে তাকে ডেকে এনে আমার রুমে বসালাম।
জানতে চাইলাম বার বার উঁকি দিচ্ছো কেন? সে বললো, আজ বিকেলে এই পাশের রুমে আমাদের নাটকের কর্মশালা হবেতো, তাই একটু দেখতে এলাম। আমি বললাম, ও আচ্ছা। আমিই তোমাদের ক্লাস নেবো।
ছেলেটি জানতে চাইলো, আর একজন আসবেন না? আমিতো তাকে এক নজর দেখার জন্য এসেছি।
আমি বললাম, আর কেউ আসবে না। আমি একাই কর্মশালা করাবো। ছেলেটি বেশ হতাশ হলো।
তারপর বললো, আমাদেরকে আমাদের দল থেকে জানানো হয়েছে, অলোক বসু আসবেন। উনি কি আসবেন না?
আমি বললাম, আমিই অলোক বসু।
সে যেন বিশ্বাসই করতে পারলো না। তারপরে যা বললো সেটা শুনে, আমার মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা।
সে প্রচণ্ড অবিশ্বাস নিয়ে জানতে চাইলো, আপনিই অলোক বসু? আপনি বেঁচে আছেন? আমিতো ভেবেছিলাম আপনি বেঁচে নেই। আমার এবার হতভম্ব না হয়ে আর কোনো উপায় রইলো না। একটু সময় নিয়ে ছেলেটির সাথে আলাপ চালিয়ে গেলাম। আমাকে স্বর্গীয় অলোক বসু ভাবার কারণটি জানা গেলো তার সাথে গল্প করে।
১৯৯১ সালে বেগম জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এই সুযোগে বলে রাখি, আমার মঞ্চাভিনয় দেখার সুযোগ তাঁর হয়েছিলো ‘ইবলিশ’ নাটক দেখার মাধ্যমে (থুক্কু সৌভাগ্যটা আমারই হয়েছিলো তাকে আমার অভিনয় দেখানোর)।
খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রথম পর্বে, ১৯৯৩/৯৪ সালের দিকে মৌলবাদী একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী গ্রামেগঞ্জে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য স্থানীয় বিচার শালিশী তারা তাদের হাতে নিয়ে নিয়েছিলো। তখন বিচার শালিশের নামে মধ্যযুগীয় কায়দায় তারা ফতোয়া দেওয়া শুরু করে।
ফতোয়ার নামে দোররা মারার ঘটনা ঘটতে থাকে অহরহ। বিচারের নামে এই প্রহসনে সেসময় বেশ কিছু তরুণী লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটিয়েছিলো। নূরজাহানের ঘটনা সে সময় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছি।
কসবায় স্বপ্নাহার নামের একটি মেয়ের প্রতিও ফতোয়ার নামে দোররা মারার ঘটনা ঘটেছিলো। আমি তখন সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত। সরেজমিনে গিয়ে সেই ঘটনা নিয়ে একটা রিপোর্ট করেছিলাম। পরে ফতোয়াবাজী বিরোধী একটি পথনাটক লিখে নির্দেশনা দিয়ে প্রদর্শনও করেছি। ‘বান্দরের কিসসা’ নামের সে পথনাটকটি পুস্তিকা আকারে বেরিয়েছিলো এবং বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে মঞ্চায়িতও হচ্ছিলো।
কক্সবাজারের একটি নাটকের দলও এই নাটকটি করছিলো। সেটাও আর এক ঘটনাবহুল ও নাটকীয়তায় পূর্ণ কাহিনী। নাটকটিতে একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠনের সমালোচনা করা হয়েছে। আর সেই নাটকের একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছিলো তাদের ছাত্র সংগঠনের এক নেতা। এ নিয়ে ঐ ছাত্র সংগঠনের অন্যান্যদের সাথে অভিনয় করতে আসা ছাত্রটির দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে।
ছাত্রটিকে বাঁধা দেওয়ার জন্য তার সংগঠনের অন্যান্যরা শো চলাকালে তার ওপরে হামলা চালাতে পারে এই আশঙ্কায় ছাত্রটি মঞ্চের নিচে আর্মস গুঁজে রেখে অভিনয় করছিলো।
এই সব ঘটনা শোনাচ্ছিলো উঁকিঝুঁকি দেওয়া ছেলেটি। আমার কিঞ্চিৎ ভয়ও হচ্ছিলো এই ভেবে যে, সে আমাকে দেখতে আসছে কেন? আবার আমার নাম অলোক বসু শুনে সে কেন অবাক হয়ে বললো, আপনি বেঁচে আছেন?
আমি একটা বাজে রকম অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। আশেপাশে আর কোনো লোকজন নেই। কেয়ার টেকার আমাকে ঘর খুলে দিয়ে কোথায় গেছে তাও জানি না। এখন যদি এই ছেলেটা কোনো বদমতলব নিয়ে আমাকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে এসে থাকে, আমি কী করবো?
না ছেলেটির কোনো বাজে অভিপ্রায় ছিলো না। বরং তার ছিলো আমাকে নিয়ে কৌতুহল। তারা যখন ‘বান্দরের কিসসা’ নাটকটির মহড়া করে, তখন তাদের নাকি খুব কৌতুহল ছিলে এর নাট্যকার অলোক বসুর সম্পর্কে। তারা জানবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু অলোক বসু সম্পর্কে তাদের জানবার কোনো রকম সুযোগ ছিলো না। তাই তারা ভেবে নিয়েছিলো অলোক বসু সম্ভবত মৃত কোনো নাট্যকার।
১৫/১৬ বছর পরে আগন্তুক ছেলেটি যখন জানতে পেরেছে অলোক বসু আসছে তাদেরকে নাটকের কর্মশালা করাতে, তখন সে বিস্মিত হয়েছে, একজন মৃত নাট্যকার কীভাবে তাদেরকে কর্মশালা করাবেন? কৌতুহল থেকেই সে দেখতে এসেছিলো আদৌ আমি জীবিত কেউ কিনা।
এই ঘটনাটা যেমন আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে, তেমনি স্মরণীয় হয়ে আছে ওখানে আমি ১৫/২০ মিনিটের একটা কর্মশালার প্রযোজনা ভিত্তিক নাটক নির্দেশনা দিয়েছিলাম, যেখানে সমুদ্র-দূষণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছিলাম।
কর্মশালার শেষদিন সন্ধ্যায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নাটকটির দুটি প্রদর্শনী হয়েছিলো। এর আগে বাংলাদেশের কোনো সমুদ্র সৈকতে এমন কোনো নাটকের প্রদর্শনী হয়েছিলো কিনা আমার জানা নাই।
তবে এই ঘটনার কয়েক বছর পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্ম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের একজন অধ্যাপক এ ধরনের একটি প্রজেক্ট করেছিলেন সম্ভবত কোনো সংস্থার আর্থিক আনুকূল্যে। তারা সম্ভবত তাদের প্রচেষ্টার নাম দিয়েছিলেন বিচ থিয়েটার। তারা মনে হয় তাদের উদ্যোগকেই বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ প্রথম বলে জানান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
৬.
বাংলাদেশের মঞ্চনাট্যে কোন দিকটা আপনাকে সবচেয়ে আকর্ষণ করে? আর কোন পরিবর্তন এলে আপনি মনে করেন মঞ্চ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে?
অলোক বসু: আমাকে সবচেয়ে বিস্মিত করে বাংলাদেশের নাট্যকর্মীদের প্যাশান। কেমন পাগলের মতো থিয়েটার করে তারা।
যেখান থেকে কোনো আয় নেই বরং প্রতিনিয়ত গাঁটের পয়সা খরচ করতে হয়, সেই কাজটা তারা এত নিষ্ঠার সাথে করে, যা ভাবাই যায় না।
রাষ্ট-সমাজের কোথাও কোনো স্বীকৃতি নাই, কোনো প্রণোদনা নাই, তাও বছরের পর বছর উপাসনার মতো করেই যাচ্ছে—এই ব্যাপারটা আমাকে ভাবায়।
মঞ্চ আরও শক্তিশালী হবে তখন, যখন রাষ্ট্র বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবে। জাতিকে শিক্ষিত, সভ্য, আধুনিক ও প্রগতিমুখি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সংস্কৃতিচর্চা তথা নাট্যচর্চাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
দিন দিন আমাদের সমাজ অধঃপতিত হচ্ছে। সংস্কৃতির এই অধঃপতন রোধ করতে পারে।
রাষ্ট্রকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সংস্কৃতি তথা নাটকের ক্ষেত্রে সরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করলে শুধু মঞ্চ নয়, রাষ্ট্রও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
৭.
বর্তমান বাংলাদেশের মঞ্চধারা আসলে কেমন? বিশ্বমঞ্চের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের অবস্থান কোথায়?
অলোক বসু: মঞ্চধারা কথাটি দিয়ে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? চর্চার ধারাবাহিকতা? নাকি চর্চার প্রবলতা?
আমাদের মঞ্চচর্চায় অবশ্যই ধারাবাহিকতা রয়েছে। তবে প্রাবল্য যেমনটা হওয়ার কথা ছিলো সেটা হয়নি।
অর্ধশতাব্দীর চেষ্টাতেও সমাজে এর প্রভাব পড়েনি তেমন।
দুই কোটি জনসংখ্যার ঢাকা শহরে ১% মানুষকেও থিয়েটারে টানা যায়নি।
সমাজকে সেভাবে গড়ে তোলার কোনো চেষ্টাই সরকারের পক্ষ থেকে পরিলক্ষিত হয়নি। তারপরেও বলা যায় আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো নাটক হচ্ছে। বিশ্বমঞ্চের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের থিয়েটার বাংলাদেশের সামাজিক-রাষ্ট্রিক প্রেক্ষিতের বিবেচনায় অনেকটাই এগিয়ে আছে।
৮.
আপনি আপনার মঞ্চের মাধ্যমে জীবনানন্দকে নতুনভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়টি একটু বিশদভাবে ব্যাখ্যা করবেন কি?
অলোক বসু: কবি জীবনানন্দ দাশ প্রতিনিয়ত নতুনভাবে আবিষ্কৃত হচ্ছেন, তাঁর নিজের মেধা ও সৃজনশীলতার কারণেই। আমাদের কিছু করার প্রয়োজন নেই।
জীবনানন্দ দাশ মারা গেছেন ৭১ বছর হয়ে গেছে। যত দিন যাচ্ছে ততই তিনি আরও জীবন্ত হয়ে ধরা দিচ্ছেন পাঠকদের কাছে। সাহিত্যবোদ্ধারা তাঁর সাহিত্যের নানাদিক নিয়ে নানাভাবে বিশ্লেষণ করছেন।
একজন নাটকের কর্মী হিসেবে বিষয়টি আমাকে আকৃষ্ট করে এবং এর মাঝে একটা নাটকীয়তা অনুভব করি। ভাবি, আজকের তরুণদের মুখোমুখি জীবনানন্দ দাশকে দাঁড় করিয়ে দিলে কেমন হয়?
আমি আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করেছি, আজকের তরুণেরা জীবনানন্দ দাশের মুখোমুখি হলে তাঁর সাথে কী কথা বলতো, কী গল্প করতো, তাঁকে কীভাবে মূল্যায়ন করতো- সেসব বুঝতে চেয়েছি আমার ‘কমলা রঙের বোধ’ নাটকের মধ্য দিয়ে।
৯.
‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকের মাধ্যমে আপনি নাগরিক জীবনে বাঙালিয়ানার এক চমকপ্রদ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এই নাটকটি আপনি নিজে কীভাবে মূল্যায়ন করেন এবং এর অনুপ্রেরণাটি কী ছিল?
অলোক বসু: ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’ নাটকটি আমার কাছে আষাঢ় মাসের প্রথম বৃষ্টির মতোই আনন্দ ও উত্তেজনাদায়ক।
কালিদাসকে আমরা বলি আদিকবি।
তাঁর কাব্য আজও বাঙালিকে প্রেম-বিরহ-বিচ্ছেদ-রোমান্সে জারিত করে রাখে। শুধু বাঙালির কেন বলবো প্রেম-রোমান্স পুরো মানব জাতির আদিম প্রবৃত্তি। রাগ-অনুরাগ-বিরাগ মানুষকে আরও সংবেদনশীল হতে, আরও মানবিক হতে সাহায্য করে।
মোহন রাকেশের এই টেক্সটকে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দশটি নাটকের টেক্সটের মধ্যে স্থান দেবো। অংশুমান ভৌমিক নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন কালিদাসের বরপুত্র হয়ে। আর নির্দেশক হিসেবে আমি চেষ্টা করে গেছি অভিনয়শিল্পী-কলাকুশলীসহ সকলের সহযোগিতা গ্রহণ করে।
এ নাটকটি আমাকে, আমার দলকে অনেক কিছু দিয়েছে, ভালোবাসা, সম্মান, সব।
আর অনুপ্রেরণা ছিলো নিজের জীবনের প্রেম।
১০.
আপনার কাজগুলোতে একধরনের গাম্ভীর্য দেখা যায়—এর রহস্য কী? (বোকা কিন্তু মজা করে বলে, আপনি নাকি সবসময় এমনই সিরিয়াস!)
অলোক বসু: কথাটা মিথ্যা নয়। আমাকে সবাই খুব গম্ভীর মনে করে। আমার নাটককেও কি গাম্ভীর্য থাকে? থাকলেতো দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেলো। গম্ভীরের বীর্যতো গাম্ভীর্যই হবে। হাঃ হাঃ হাঃ।
আসলে আমি খুব সাধারণ একজন। কিন্তু মানুষকে বোঝাতে চাইতাম, আমি অসাধারণ কেউ। সেজন্য একটা ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রেখে চলতাম, যাতে কেউ কাছে ঘেঁষতে না পারে।
কাছে ঘেঁষলেইতো জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাবে। তবে আমার কাজে গাম্ভীর্য ঢুকে পড়ছে কীভাবে তা বলতে পারবো না।
১১.
কবিতা নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী? মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার কিছু ছত্রও চোখে পড়ে—কবিতা আপনার জীবনে কতটা স্থান দখল করে আছে?
অলোক বসু: কবিতা নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। মাঝে মাঝে সবার মাঝেই কবিতা ভর করে। আমারও করে। হয়তো লিখে ইদানিং পোস্ট দিয়ে ফেলি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আগে মাঝেমধ্যে সংখ্যায় কম হলেও পত্রিকায় ছাপা হতো। এটা করা বোধ হয় ঠিক না।
সত্যিকারের কবিদের অবশ্য তাতে কিছু আসে যায় না। রাতদিন নিপাত করা কবি যশপ্রার্থীরা হয়তো আমার ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারেন এই ভেবে, পুরান পাগল ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি।
সাহিত্যের মাঝে কবিতাকে আমি সবার উপরে স্থান দিই। নিজে লিখতে পারি না ভালো। তবে ভালো কবিতা আমার কাছে স্বর্গের ঝুল বারান্দার মতো তৃপ্তিদায়ক। সেজন্যই কবিতা পড়ে, আবৃত্তি করে আনন্দ পাই।
১২.
আপনি এখন মূলত কোন কাজগুলোতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন?
অলোক বসু: আমার দিন কেটে যায় ভেবে ভেবে।
চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। অবসর নেয়ার আগে ভাবতাম সার্বক্ষণিক লিখে, নয়তো নাটক করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবো।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ইদানিং ভাবি আমার জন্য সুবিধাজনক কোনো চাকরি পেলে ঢুকে যাবো, আবার ভাবি একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো।
আবার ভাবি, শিশুদের গড়ে তোলার কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার সুযোগ থাকলে গ্রহণ করবো।
এসব ভেবেই সময় কেটে যায়।
১৩.
বাংলাদেশ, বাংলা আর বাঙালির রূপরেখা নিয়ে আপনার বক্তব্য কী? যেহেতু আপনার কাজে জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ… আর বাংলাদেশের অস্তিত্বকে পাওয়া যায়।
অলোক বসু: খুব কঠিন প্রশ্ন। বাংলাদেশ, বাঙলা আর বাঙালি একটি সমবাহু ত্রিভুজ। সমবাহু ত্রিভুজের প্রতিটি কোণই ৬০ ডিগ্রি। তবে ভবিষ্যতে এর শীর্ষ কোণটি ৬০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাবে।
জ্যামিতির নিয়ম অনুযায়ী, তখন বিপরীত বাহুটিও ছোট হয়ে যাবে। এই বাহুটিই হলো বাঙালিত্ব।
এই বাহুটিকে খর্ব করার সব রকম আয়োজন চলে আসছিলো দীর্ঘদিন ধরে। এখন তা মহাসমারোহে চলছে।
জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলেরা এই খর্ববাহুতে বসে গলা চেঁচিয়ে ক্লান্ত টিয়া পাখির মতো শুধু গেয়ে চলবেন-
“বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা–
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান ॥
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন–
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান ॥”
বাঙালির পণ, আশা, কাজ, ভাষা কিছুই সত্য হবে না আর বাঙালির প্রাণ-মন এক হবে না, বাঙালির ঘরের ভাই বোনেরাও এক হবে না। নীরোদ সি চৌধুরী চিনেছিলেন ঠিকই – আত্মঘাতী বাঙালি।
তারপরও আমরা মিছে আশায় বুকে বেঁধে ক্লান্ত টিয়াকে উৎসাহ দিয়ে যাই।
১৪.
কোন বিষয়টা এখনও আপনার কাছে অধরা? যেটা বারবার ধরতে চেয়েও ধরতে পারেননি।
“আমার যখন ৫১ বছর বয়স তখন মাথায় একটা ভাবনা এলো। ৫১ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটা স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আর আমি ৫১ বছরে কী করছি? তখন থেকেই ভেবেছি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা নাটক লিখবো।”
অলোক বসু: অনেককিছুই অধরা আমার কাছে। তবে যা ধরতে চেয়েও ধরতে পারিনি, সেরকম অনেক কিছুই রয়েছে।
তবে না ধরতে পারার একটা হলো- বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা ক্লাসিক নাটক লেখা।
আমার যখন ৫১ বছর বয়স তখন মাথায় একটা ভাবনা এলো। ৫১ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটা স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আর আমি ৫১ বছরে কী করছি? তখন থেকেই ভেবেছি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটা নাটক লিখবো।
৫৫ বছর বয়সে তাঁকে খুন করা হলো। আমিওতো যেকোনো সময়ে মারা যেতে পারি। তাই মরে যাওয়ার আগে লিখে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে শিল্পকলা একাডেমি থেকে আমাকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক লিখতে অনুরোধ করা হয়েছিলো।
অনেকেই অনেক নাটক লিখেছেন। লিখলে হয়তো আমি একটা ভালো সম্মানী পেতাম। আমি লিখিনি। আমি সবিনয়ে তাঁদের অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, পাঁচ বছর ধরে চেষ্টা করে পারছি না, আগামী ৩/৬ মাসে সম্ভব নয়। আর, লেখাটা আমি কারো জন্য, কারো মতো, কারো অনুরোধে লিখবো না, পারলে নিজের নিজের মনের তাগিদেই নিজের মনের মতো করেই লিখবো।
জানি না সে নাটকটি কবে লিখতে পারবো।
নাট্যকর্মী হিসেবে অলোক বসু মানুষ হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করবার কথা বলেছেন। এছাড়া, কোনো কাজই ছোট নয়। ছোট বড় নির্ধারিত হয় আন্তরিক ও সফলভাবে কাজটি সম্পাদনের মাধ্যমে। এটাই নাট্যকর্মী হিসেবে জীবনের বড় শিক্ষা।
এবং আরো কয়েকটি প্রশ্ন...
১৫. তরুণ প্রজন্মের জন্য মঞ্চ বা সৃজনশীল কাজ কতটা দরকার বলে মনে করেন?
অলোক বসু: খুব দরকার! খুব দরকার!! খুব দরকার!!!
১৬. মঞ্চের বাইরে আপনার কি কোনো অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে?
অলোক বসু: অনেক আছে। সেগুলো এখানে আর না বলি।
১৭. অনেকে আপনার কাজকে ‘আলাদা ধারা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। আপনি নিজে এ ব্যাপারটি কেমনভাবে দেখেন?
অলোক বসু: প্রত্যেকেই যার নিজের মতো করে ভাবে। সে কারণেই প্রত্যেকের কাজ আলাদা হয়। তবে যাদের কাজের পূর্বাপরে একটা চিন্তার যোগসূত্র থাকে, তাদের কাজ আলাদা ধারার হয়। আমার কাজেও নিশ্চয়ই আমার একটা সিগনেচার থাকে। সেটা না থাকলে আলাদা করে চোখ পড়বে কেন?
আমার নিজের কাজ অন্যদের থেকে আলাদা, সেটা ভাবার মধ্যে একটা আনন্দ থাকে। আমি সে আনন্দ উপভোগ করি।
১৮. নাট্যকর্মী হিসেবে আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?
অলোক বসু: প্রথমত- মানুষ হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত- কোনো কাজই ছোট নয়। ছোট বড় নির্ধারিত হয় আন্তরিক ও সফলভাবে কাজটি সম্পাদনের মাধ্যমে।
১৯. যদি জীবনের শুরু নতুনভাবে করা যেত, তবে কি আপনি আবার থিয়েটারকেই বেছে নিতেন, নাকি অন্য কোনো পথ হাঁটতেন?
অলোক বসু: হ্যাঁ এবং অবশ্যই আরও ছোটবেলা থেকে থিয়েটার করা শুরু করার কথা ভাবতাম।
মেহেদী স্বাধীন: অনেক ধন্যবাদ, আমাকে সময় দেওয়ার জন্য।
অলোক বসু: আপনাকেও ধন্যবাদ। বোকার পাঠকদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
অলোক বসুর প্রতিটি বাক্যেই ধরা পড়ে এক জীবনের যাত্রা—অহংকারহীন, হাস্যরস মিশ্রিত, অথচ গভীরভাবে চিন্তাশীল। তিনি বিশ্বাস করেন, “মানুষ হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা” ছাড়া কোনো শিল্প, কোনো জীবনই সম্পূর্ণ নয়।
যিনি নিজের মৃত্যুর খবর শুনেও মুচকি হেসে বলেন—“আমি এখনও বেঁচে আছি”—
তাঁর মঞ্চ, তাঁর লেখা, তাঁর কণ্ঠ—সবই যেন প্রমাণ দেয়, সত্যিকারের শিল্পী কখনও মরে না, কেবল মঞ্চ পাল্টায়।
বোকা’কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের অনন্য ব্যক্তিত্ব অলোক বসুকে আমাদের সামনে আনার জন্য,তাঁকে গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দেবার জন্য।
বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই নাট্যকার, নির্দেশক গুণীজন অলোক বসু দাদাকে…
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
বোকায় লেখা পাঠাতে write@bokabd.com এই ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করুন।