শ্মশান ঠাকুর- কাঠামোতে কলোনিয়ান পোঁকা

Table of Contents

চলমান জীবন বাস্তবতার কাঠামোগত মূল্যায়ন করবার সাহস সাধারণত আমরা করি না। আর বোকাদের জন্য তো তা একেবারেই বারণ! বোকারা অতো অতো কঠিন কথা জানতে-বুঝতে চায় না। তাহলে কী চায় বোকা? বোকা চায় সহজে সামন্যে তার দেখা! এই তার আসলে কে? এর সমাধান বোকার জীবনে কখনো ঘটে না! বোকা এক জীবন ভাবনায় ডুবে থেকে হারিয়ে যায় মাটির অতলে। বোকার জানা হয় না, এই জীবনের কী মানে? এই যে সামনের ফুটপথে কিংবা ভাড়ার ঘরে এক মুঠো যন্ত্রণার ভার বইবার শক্তি যে বোকা সমাজের থাকে না, সেই ব্যাথা বইবার জন্য শ্মশান ঠাকুর নেমে আসেন পথে। শ্মশান ঠাকুর তার স্বপ্নের সাথে জীবন বেঁধে রেখেছেন। বাস্তবার সাথে স্বপ্নকে নয় বরং চাওয়া স্বপ্নের মতো বাস্তবতাকে খণ্ডন করেন। এখনো স্বপ্ন দেখেন, এখনো এক নির্ভার জীবন দিতে চান মানুষে। সেই শ্মশান ঠাকুর বোকার জন্য লিখে পাঠিয়েছেন অতীত জীবন বাস্তবতার ভেতর লুকিয়ে থাকা সব থেকে ধুরন্দর পোঁকা কী করে আমাদের বোকাদের বেকুব বানিয়ে চলেছে এখনো সেসব কথা। হয়তো সেটি ঠিক কিংবা ভুল। বোকা সে খণ্ডন করবে না। বোকা সবের কথা শুনতে চায়। তারপর বোকা ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকতে চায় শূন্য দৃষ্টি নিয়ে আকাশে। শ্মশান ঠাকুরের পুরো লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো। -বোকা

পৃথিবীতে যে কোন সমস্যার দৃশ্যগত লক্ষণ একাধিক হলেও মূল কারণ থাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা কারণ। বাংলাদেশে তেমনি দুর্নীতি এবং লুটতন্ত্র যখন প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাজমান, তার একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। চলমান রাজনীতিকে ব্যবচ্ছেদ করলে, গণতন্ত্র চর্চার নামে যে রাজনীতির চর্চা চলছে তা মূলত সামন্তবাদী ধনীদের রাজনীতির কাঠামো। এই কারণে ধনতন্ত্রের রাজনীতি কিংবা শ্রম শ্রেণীর রাজনীতি কোনটাই এখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে নাই। রাজনীতি বলতে, এখানে লুটতন্ত্রের একটি প্রকাশ্য সুবিধাবাদী অংশকে বুঝানো হয়, যারা শুধুমাত্র ক্ষমতা এবং অর্থের জন্য রাজনৈতিক সকল হাল-হাতিয়ার ব্যবহার করে।

রাজনৈতিক এই কাঠামোর সূচনা বৃটিশ আমল থেকে। সিপাহী বিদ্রোহের পর কলোনিয়ান রাজনৈতিক কাঠামো এত শক্তিশালীভাবে তৈরি করা হয় যার অবস্থান বৃটিশ চলে যাওয়ার পরও অক্ষত। যাকে আমরা পোস্ট কলোনিয়ান বেড়িয়ার বলছি। এবং আমাদের রাজনৈতিক মুক্তির পথে প্রধানতম বাধা হয়ে উঠেছে এই বৃটিশ কাঠামো। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ রাজ ভেঙ্গে গেলেও তার কাঠামোগত অবস্থান ( প্রশাসন / শিক্ষা / বিচারবিভাগ / অর্থ ব্যবস্থা / বণ্টন) রয়ে যায়, সেই কাঠামোগত বিভক্তির কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তবে ৭১’র পর সেই বৃটিশ শোষন কাঠামো আরো ভয়াবহ রূপ ধারন করে।

বৃটিশরা আমাদের শিক্ষিত করছে, সভ্য করছে, এমন বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য আমাদের তখনকার ধনীতন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বৃটিশ আমলে জমিদারের সংখ্যা বাড়লেও, সাধারণ মানুষ হয়েছে ভূমিহীন, নিঃস্ব। মোঘল আমলেও বাংলায় ভূমিহীন কোন মানুষ ছিলো না। বরং প্রতিটি গ্রামগুলো ছিলো স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি রাষ্ট্র। বৃটিশ লুটের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১সালের পর নব্য টাকাওয়ালা বা পুঁজিপতি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশহারা মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। গত পঞ্চাশ বছরেও কলোনিয়ান কাঠামো চিহিৃত না করার কারণ, বৃটিশ কাঠামোর রাজনীতি চর্চা বা ব্যক্তি পূজার রাজনীতি চর্চা এখনও চলছে। কলোনিয়ান কাঠামোতে রাজনৈতিক দল একটি লিমিটেড কোম্পানী, যা ব্যক্তি, পরিবার বা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ নিয়ে কাজ করে, সমগ্র জাতি সত্ত্বা বা জনসাধারণের স্বার্থ নিয়ে নয়।

কলোনিয়ান রাজনীতির জনক হলেন, বৃটিশ শখের পাখি বিশারদ অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম।

ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর স্কুল-কলেজে বেড়ে উঠা হিউম সিপাহী বিদ্রোহের সময় ভারতীয় বিদ্রোহীদের হত্যার জন্য ‘ অর্ডার অফ বাথ’ সন্মান পায়। থিওজোফিক্যাল সোসাইটির সদস্য উইলিয়াম ওয়েরবার্ন, সদ্য খ্রিষ্টীয় উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় , অক্টোভিয়ান হিউমসহ আরো বৃটিশ অনুগত ভারতীয় নিয়ে তৈরি হয় জাতীয় কংগ্রেস। সিপাহী বিদ্রোহের পর থেকে ভবিষ্যত্যের কথা চিন্তা করেই রাজনীতিতে এই কোম্পানী কাঠামো ব্যবহার করে তারা। যাতে জনগণের যে কোন সংগঠন ব্যক্তির সম্পত্তিতে রূপান্তর হয় বা ব্যক্তি মালিকানা ছাড়া সংগঠন অক্ষম, জনশূন্য হয়ে যায়। ভারতীয় কংগ্রেস তাই সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষের রাজনৈতিক সংগঠন হয়েও, একশো বছর পর নেহেরু-গান্ধী পরিবারের সম্পত্তিতে পরিনত হয়েছে। এটাই কলোনিয়ান রাজনৈতিক কাঠামো।

অন্যদিকে ভারতীয় মুসলিম সমাজ সিপাহী বিদ্রোহে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে বৃটিশের অনুকর নিজেদের উপযুক্ত করতে শুরু করেন। বৃটিশ প্রীতি হয়ে উঠে প্রগতিশীলদের জাতে উঠবার একমাত্র উপায়। অনুকরণ প্রিয় কোন গোষ্ঠীর পক্ষে সে স্থানের রাজনীতিকে জানা এবং করা সম্ভব নয়। তাই মুসলিম সমাজ পরিস্থিতির কারণে কংগ্রেসের অনুকরণে মুসলিম লীগ তৈরি করতে বাধ্য হয়। আগা খান হন তার প্রথম সভাপতি। আগা খান ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের ইমাম, তবু তাকে জাতে তুলবার জন্য বৃটিশ রাজ তাকে ‘নাইট হুড ’ সন্মানে ভূষিত করেন এবং দায়িত্ব দেন মুসলিমদের নিয়ে রাজনৈতিক সংগঠনের।

ভারতবর্ষের কাছে এক সময় পৃথিবীর ২৫ ভাগ অর্থনীতি ছিলো অথচ সেই ভারতবর্ষে ১৯০৩ সালে কয়লা শ্রমিকের সংখ্যা ৭৪,৫৩৮ জন।

ভারতের কয়লা শ্রমিক, ছবি: বিবিসি

ভারতবর্ষের জনগণ তখনও স্থানীয় রাজনীতি শূণ্য। একদিকে গোপনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সাংগঠনিক কোন রাাজনীতি তখনও দৃশ্যগত ছিলো না। ভারতে বৃটিশরা তখন তৈরি করেছিলো বিশাল কারখানা এবং শিল্প। ফলে ভূমিহীন মানুষ শ্রমিকে রূপান্তর হয়ে গেল রাতারাতি। যে ভারতবর্ষের কাছে এক সময় পৃথিবীর ২৫ ভাগ অর্থনীতি ছিলো ১৯০৩ সালে সেই ভারতবর্ষে কয়লা শ্রমিকের সংখ্যা ৭৪,৫৩৮ জন। একটি সম্পদশালী জনগণ কিভাবে শ্রমিকে রূপান্তর হলো সেই ইতিহাস বারবার জানবার এবং বিশ্লেষণ করার দরকার থেকে যায়। ১৯০০ সাল থেকে ১৯০৫ সালে চা বাগান শ্রমিক ৬,৬৪,৮৯৭ জন, পাটকল শ্রমিক ১,৫৪,৯৬২ জন এবং কাপড় কলের শ্রমিক সংখ্যা ১,৯৫,০০০জন। ভারতবর্ষে সমাজতন্ত্র বা কমিউনিস্ট নিয়ে যারা চিন্তা করতেন, তারা প্রকাশ্য কংগ্রেস এর সেবক ছিলেন, তাই এই শ্রমিক শক্তি জনগণের মুক্তির পথে কোন অগ্রগামী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়।

কমিউনিস্ট পার্টির সূচনা

বিচ্ছিন্নভাবে, গুপ্ত এবং গোপন সংগঠনের নাম শোনা গেলেও কমিউনিস্ট পার্টি গঠন সূচনা হয় ১৯২৫ সালে। ১৯২৬ সালে বৃটিশ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ফিলিপ স্প্রাট আসেন ভারতবর্ষের বিপ্লবীদের কমিউনিস্ট শিক্ষা দিতে। ১৯২৭ সালে আসেন বেজ্ঞামিন ফ্রান্সিস ব্রাডলে। বিপ্লবের মুখে দাড়ানো একটি জাতির অগ্রগামী মানুষগুলোকে তারা সুশীলে রূপান্তর করেন। মূলত এখনও ফিলিপ এবং ব্রাডলের শিখানো শ্রমিক এবং শ্রেণী রাজনীতি আমাদের বিপ্লবী বাহিনীকে অতিশ্রেণীকরণে মাধ্যমে লড়াই থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে এবং আজও রাখছে। তাই সকল শ্রমিক সংগঠন মধ্যবিত্ত দিয়ে ভর্তি, কোন প্রকার শ্রমিক সেখানে নেই। মূলত বৃটিশ আমলেই শ্রেণী সংগ্রামকে ব্যক্তিচর্চা থেকে এত দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে যে আজও ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’অনুসারে কোন কমিউনিস্ট পার্টি বাংলায় তৈরি হয় নাই। বরং বৃটিশের দালাল অনুসারেই তৈরি হচ্ছে আমাদের সকল কমিউনিস্ট রাজনীতি।

কলোনিয়ান রাজনীতির সবচেয়ে ভয়াবহ অংশ শুরু হয় ১৯৪৭সালের পর থেকে, যাকে পোস্ট কলোনিয়ান সময় বলা হয়। এই সময় রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা জাতি সত্ত্বাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। সফল হয় বৃটিশের হিন্দু-মুসলিম তত্ত্ব। এক মিনিট আগে-পরে বৃটিশের হাত থেকে মুক্ত হওয়া ভারত এবং পাকিস্থান দুটি আলাদা দেশ জন্মেই একে অপরের শক্র হয়ে যায়। খুন হয় হাজার হাজার মানুষ। ধর্মের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের হত্যাকে বৈধতা দেয় নতুন জন্ম নেয়া দুটি রাষ্ট্রই।

শত্রুতা নিয়ে জন্মানো বা শত্রুতার শর্তেই জন্ম নেয়া এই দুটি রাষ্ট্রের একটি পাকিস্থান। যার অবস্থান সম্পূর্ণ দুটি ভিন্ন স্থানে। পূর্ব এবং পশ্চিম পাশে। বৃটিশ রাজনৈতিক কাঠামো অপরিবর্তন রেখে মুসলিম লীগ হয়ে যায়, পূর্ব পাকিস্থান আওয়ামী মুসলিম লীগ, তারপর নিখিল পাকিস্থান আওয়ামী লীগ এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ। -শ্মশান ঠাকুর

আওয়ামী লীগ জন্মের সময় সংগঠনটির, গঠনতন্ত্রের দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র কাদের স্বার্থের উপর নির্ভর করে তৈরি করা হবে, সংগঠনের চরিত্র, চর্চা, কৌশল এবং প্রকাশ-বিকাশ। সে প্রশ্নের উত্তরে, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র তৈরি হয় তার দলীয় নেতা-কর্মীর স্বার্থে এবং প্রয়োজনে। যা একটি লিমিটেড কোম্পানী অথবা ডাকাত সংগঠনের ভিত্তি। দর্শন গত কারণে এখানে সামান্তবাদের মাৎস্যন্যায় চর্চা উর্বর হয়ে উঠে এদেশের রাজনীতিতে। বড় ডাকাত ছোট ডাকাতকে খেয়ে ফেলে। এক্ষেত্রে রাজনীতিক সম্প্রদায় এখানে একটি সুগঠিত সংগঠন চর্চা করায়, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অনুকরণে তৈরি হয় এ ভূখন্ডের রাজনীতি।

বৃটিশ থেকে মুক্ত পাওয়া রাষ্ট্র, ভারত পাকিস্তানের জনগণের ভিতর রাজনীতি বিষয় বিশ্বাস জন্মেছিলো যে, ক্ষমতার চারপাশে ঘোরাঘুরি এবং তোষামোদ করে, ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার যায়। তার জন্য জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার দরকার নাই। বৃটিশ যেভাবে চলে যাওয়ার সময় বিশ্বাসী গোলামের হাতে দিয়ে যায় ভারত এবং পাকিস্তানের ভূ-খন্ড। রাজনীতি তখন হয়ে উঠে জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং জনবিরোধী।

মূলত মূলধারার রাজনীতিতে জনগণের প্রবেশের পথ বন্ধ বৃটিশ আমল থেকে। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক যে ধারা তৈরির চেষ্টা করা হয়, বাস্তবে যা পরিবারতন্ত্র বা সামন্তবাদের ক্ষমতা কাঠামোই রয়ে যায়। কিন্তু গণতন্ত্রের বিজ্ঞাপনে কমিউনিস্ট ধারা বিলুপ্ত হতে থাকে। শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রগামী বাহিনীকে মধ্যবিত্ত নেতাদের নির্দেশে আরো শ্রমিকীকরণ বা অতিশ্রেণীকরণ করতে গিয়ে কমিউনিস্ট ধারাগুলো অসংখ্য নালায় ভাগ হয়ে ব্যর্থ গণতন্ত্রের চর্চাই করেছে কারণ বৃটিশ কলোনিয়ান রাজনৈতিক কাঠামোই এমন, তাই এখানে কমিউনিস্ট চর্চা হয়ে উঠে মূলত কলোনিয়ান কমিউনিস্ট।

কমিউনিস্ট ধারাগুলো অসংখ্য নালায় ভাগ হয়ে ব্যর্থ গণতন্ত্রের চর্চা করছে

পোস্ট কলোনিয়ান রাজনৈতিক দলীয় সংকট সমূহকে আমরা মোটা কিছু ভাগে বিভক্ত করতে পারি।

লটারি রাজনীতি বা জনবিচ্ছিন্ন হয়েও নেতা হওয়া সম্ভাবনা। সমাজের লুটতন্ত্র বা ধনতন্ত্র, বিচার এবং প্রচার বিভাগকে এমনভাবে ব্যবহার করে, যাতে যে কোন ব্যক্তিকে, যে কোন সময়, আসামী অথবা জনপ্রিয় চরিত্রে রূপান্তর করতে পারে। আর্দশ বা মানদন্ডের গোপন কারসাজি, যা অরাজনৈতিক কিন্তু সমাজে আর্দশ সততুল্য প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞাপন এবং ধনতন্ত্রের সমাজে পরিচিত হয়ে, লটারি পাওয়ার মতো যে কোন ব্যক্তি যে কোন সময় জনবিচ্ছিন্ন হয়েও নেতা হয়ে যেতে পারে এবং হয়েছে। নেতাদের সন্তানদের মূলত এই পদ্ধতিতে নেতা করা হয়।

ঈশ্বরিক বাণী বা সাহিত্য রাজনীতি। বৃটিশ সরকারের আদেশ এবং নির্দেশ মানা করাই তার কর্মচারী এবং গোলামের মূল দায়িত্ব। এখানে নেতা বা দল বা প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে সকল চিন্তা- সমাধান- দিক নির্দেশ এবং ভবিষ্যত রূপরেখা দিয়ে দেয়া হয়, যা মান্য করা পরবর্তী নেতা-কর্মীর জন্য আবশ্যক। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই পদ্ধতিতে তৃণমূল রাজনীতি স্লোগান দেয়া ছাড়া, আর কোন কাজে রাজনৈতিক চর্চায় অংশগ্রহন থাকে না। ফলে জনগণের রাজনীতি স্রোতের বিপরীতে কেন্দ্র অর্থাৎ তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতা পর্যন্ত কোন চিন্তা যেতে পারে না। নেতারা এখানে সবজান্তা এবং মূল বক্তা। দলের নেতা-কর্মীদের মূল রাজনীতি নেতাকে দৃশ্যগত অনুসরণ- অনুকরণ করা। শেখ মুজিবুর রহমানের কোট এবং জিয়াউর রহমানের চশমা যে বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশে বিশেষ রাজনৈতিক ভূমিকা তৈরি করে রেখেছে।

গ) গঠনগত বিচ্ছিন্নতার: সাংগঠনিক চর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একই সংগঠনের শ্রমিক নেতা এবং ছাত্র নেতাকে সংগঠনে মূল্যায়ন আলাদা। সংগঠন নিজে যখন কোন সক্রিয় জনগণকে ছাত্র/যুব/শ্রমিক/ বুদ্ধিজীবি ভাগে বিভক্ত করবে, তখন তা ব্যক্তি সংস্কৃতির, বিরোধী রাজনীতি হয়ে যায়। ব্যক্তি যে শিকল বা প্রতিবন্ধকতা ভাঙ্গতে চায়, সেই প্রতিবন্ধকতাকে তারই অস্তিত্বকরণ, বৃটিশ কলোনিয়ান রাজনীতির একটি বড় সাফল্য। যার ফলে আমাদের রাজনীতিক সংগঠনগুলো শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে গঠনগতভাবেই বিচ্ছিন্নতার চর্চা করে। শ্রমিক-ছাত্র- পেশাজীবি একে অপরের প্রতিপক্ষ মনোভাব নিয়ে একই দলে অবস্থান করে।

ভারতবর্ষের রাজনীতিতে বৃটিশ কাঠামো বা পোস্ট কলোনিয়ান ভাইরাসকে একবাক্যে প্রকাশ করা যায় এভাবে, বৃটিশ কলোনিয়ান রাজনীতি হলো, ব্যক্তি সংস্কৃতির বিরোধী চিন্তা, অস্তিত্ব হিসাবে স্বীকার করায় সেই ব্যক্তিকে দিয়েই। জোর করে। বিজ্ঞাপণ দিয়ে। উন্নয়ন বা উন্নতির কথা বলে। জাদু দেখিয়ে। ধনতন্ত্রকে তার অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য যে সব হাল হাতিয়ার দরকার তার সবকিছুই ব্যবহার করবে ব্যক্তিকে তার রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাখার জন্য। বৃটিশ কাঠামোর কারণে আজও তাই রাজনীতিভাবে জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতির চর্চা হয়ে আসছে, তাই রাজনীতিও জাতিকে মুক্তি দিতে অক্ষম, যতক্ষণ না রাজনীতি উপনিবেশিক চর্চা থেকে বের হয়ে আসবে।

শ্মশান ঠাকুরের লেখাটি এখানেই শেষ হয়েছে। এটি কোনো রাজনৈতিক নথি দিয়ে জাস্টিফাই করতে চায় না বোকা। বোকা ভাবতে চায় এর সাথে বোকাজনের যুক্ততার কথা। কথা যতো তিক্তই হোক বোকাসমাজে বোকা যেমন খুশি তেমন রা করবে। একটা ব্যাপার হয়তো আমরা ভুলে যাই যেমন খুশি তেমন করবার জন্য একটা পশ্চাৎ কর্মযোগ থাকে। যেটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। সে যাই হোক এই লেখাটির বয়ানে চালাক মহল ক্ষিপ্ত হয়ে বোকাদের এই প্লাটফর্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। বোকাকে বোকা মনে করে হেসে উড়িয়ে দিতে পারেন। -বোকা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top