বখতিয়ার-এর ঘোড়া (রিভাইজ)

কবি আল-মাহমুদের বখতিয়ারের ঘোড়া-কে বিদ্রোহী কৃষক রিভাইজ করে একটি ইতিহাস উন্মোচন করবার চেষ্টা করেছেন এই কবিতায়। কবির কিছু প্রশ্ন সেই কবিতাকে দিয়েছে আলোর উন্মেষ! তাই প্রশ্নগুলো আমরাও করতে পারি। বাঙালির জন্য বখতিয়ারের ঘোড়া কি শান্তির পরশ নিয়ে এসেছিল? বঙ্গ ভূমি কি বখতিয়ারের ঘোড়ার তেজে সত্যকে উন্মোচন করেছিল? নাকি একটা ভয় বঙ্গভূমে রচিত হয়েছিল? চলুন পড়ি বিদ্রোহী কৃষকের কবিতার বখতিয়ার-এর ঘোড়া (রিভাইজ) 

 

সুনসান নীরবতা।
অশোক-এর পাতা নীরবে কাঁপছিল।
মৃদু-ভূ কম্পনের লক্ষণ।
বাতাসে ভর করেছিল ভয়।
নারীরা সিঁদুর মুছে ফেলেছে।
পায়ের নকশা অ্যারাবিক কৌশল হয়ে গেছে ততক্ষণে।

বনে-জঙ্গলে পালিয়েছে হনুমানজি।

শস্য আর সূর্যী দেবী ছেড়ে গেছে পূজারী।
এমনটা আগে কখনও ঘটেনি।

সুঢৌল শরীর ঘোড়ার পিঠ ঠেসে দিয়েছে মাটিতে।

হে বখতিয়ারের ঘোড়া তুমি কি সু-সংবাদ এনেছো?
নাকি দানব দাঁত কেলাচ্ছে নাঙ্গা খঞ্জর হাতে?

নিরীহকে অধিগ্রহণ নেশায় মত্ত একটা দল।
যোনী পথ খুলে দাও; একটা অধ্যায় আবার
ভ্রুণ হয়ে ঢুকে গেছে জঠরে।

আসো শান্তির ছায়া তলে।
আসো, নিজে থেকেই হয়ে যাও।
ওই যে সিন্দুক। সেখানে রাখবো তোমায়।
তুমি গণিমতের মাল হয়ে যাও।

হে বখতিয়ারের ঘোড়া তুমি আর কি এনেছো?
এই বাংলা ভূখণ্ডে।

সেদিন তুমি আর যা এনেছিলে
তার নাম আরোপিত বিশ্বাস
আরও একটা ভাইরাস

 

  • “আমার যে বোধটি একটা সময় অন্ধকূপ অতিক্রম করতে পারছিল না তখন ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ আমাকে আশার আলোর দিকে টেনে নিয়ে যায়। সেদিন আমি আমার আত্মার সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। বখতিয়ারের ঘোড়ার খুর আমার বুকের জমিন থেঁতলে দিয়ে যাচ্ছিল। আর ওই রাজসিক ঘোড়ার হ্রেষা আমার প্রতিটা স্পন্দন চাবকে দিচ্ছিল।যেন- ওরে বেহায়া অতটা সময় পার করে বুঝলি তুই এখনও নিরেট গাধা! হায়! আমি কি বখতিয়ারের ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করবার সাধ জাগিযেছিলাম!
  • মানুষ-এর বয়স বাড়ে। একদিন হয়তো এই মানুষেরই আর বয়স বাড়বে না। সুন্দর প্রাণোবন্ত শিশুটা স্রেফ শিশুই থেকে যাবে। তাকে সবাই আদরে আহ্লাদে আটখান করে তুলবে। কিন্তু, এখন? সকল বিকারগ্রস্তের স্বাক্ষীসদয় হয়েছি। বুড়োভামের চিন্তাটা যদি আমায় জাগায় মন্দ কি? যে অন্তত আমাকে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার স্বপ্ন দেখায়! আমি তাতে ডরি কি?
  • অথচ আমি চাইলাম ওই ঘোড়ার পিঠে করে অশোকের ধূসর জগতটাকে দেখে আসবো। সে দিন কে ছিল এই ভূখণ্ডে? কোন অবলার স্বপ্ন সে খুরের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছিল সে কাহিনীটাও। আমার মন কোনও যুদ্ধ যুদ্ধ শব্দের ধ্বনি প্রতিধ্বনি শোনে না।
  • আমার হৃদয় কোনও জেহাদের জন্য জাগে না। আমার হাতে নাঙ্গা তলোযার খেলে না। আমার হৃদয়ে যে মক্কা মদীনার ধ্বনি; সেখানে সহস্র বছরের মানব জন্মের প্রেম-বিরহের গান।”
  • “সেদিন তুমি আর যা এনেছিলে
    তার নাম আরোপিত বিশ্বাস
    আরও একটা ভাইরাস।”
    -বিদ্রোহী কৃষক

 

বখতিয়ার-এর ঘোড়া (রিভাইজ)’ (বখতিয়ারের ঘোড়া) কবিতাটি বিদ্রোহী কৃষকের ‘নাছোড়বান্দা’ কবিতার পাণ্ডুলিপি থেকে নেয়া। কবি জানিয়েছেন, এই কবিতাটি কবি আল মাহমুদ-এর বখতিয়ারের ঘোড়া কবিতাটির প্রতিক্রিয়া। কবি মনে করেন, বখতিয়ারের ঘোড়ার রূপটা যুদ্ধবাজ ঘোড়ার নয়। বখতিয়ারের ঘোড়ার পিঠের আরোহী নিজেও জানতেন তিনি একটি আরোপিত শান্তির সুবাতাস দিতে এসেছেন। চলুন কবিতাটি নিয়ে কবির নিজের কথা এবং কবিতাটির অংশ-বিশেষ পাঠ করি। -সম্পাদক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top