বোকাবিডি তার সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুসারে যে কাউকে উনিশকুড়ি বিভাগের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারে। বোকা সমাজের হয়ে যে কোনো প্রশ্ন আমন্ত্রিত অতিথিকে করতে পারে। তাতে যদি কোনো গোষ্ঠি কিংবা ব্যক্তিবিশেষের অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে বোকা তার জন্য বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কারণ বোকা জানে হাতেগোনা ক’জন ছাড়া আসলে সাধারণে তেমন কোনো আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। কারণ বোকা সংখ্যালঘু হয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ।
…
বোকা চেয়েছে বাংলা দেশের বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে নতুন প্রজন্মের কাউকে উনিশকুড়িতে হাজির করতে। যে দেশ এবং দশের মঙ্গলের জন্য কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আসলেও কি করেছে? কিংবা আসলে কী করেছে? তাই বোকা সেসব জানতে সরাসরি প্রশ্ন রেখেছে অমি রহমান পিয়ালকে। উনিশকুড়ি বিভাগের আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে তাই থাকছে অমি রহমান পিয়ালের সাথে মেহেদী হাসান স্বাধীনের বাতচিৎ।
পাঠক, প্রশ্ন শুরু করবার আগে আপনাদের অমি রমান পিয়াল সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে রাখতে চাই। তাতে আলাপটা সহজবোধ্য হয়ে উঠবে। তখন বাংলাদেশে সামহোয়ারইন ব্লগ যাত্রা করেছে। অনলাইনে সোস্যাল প্লাটফর্ম হিসাবে ব্লগ সাইটের তখন ব্যাপক প্রভাব। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে এটি একটি অনন্য মাত্রা তৈরি করে। আড্ডাবাজ তরুণরা তখন কেবল আর গাছতলা, টিএসসি, কিংবা মাঠে ঘাটে চায়ের দোকানে আড্ডায় থেমে থাকেনি। আড্ডার নতুন ফর্মুলা হয়ে গেছে ততদিনে বাংলায় ব্লগিং সাইটগুলো। যদিও তখন সামুই হলো পাইওনিয়ার। পরে আমার ব্লগ কিংবা সচলায়তনের মতো সাইট আসলেও সামুর মতো ব্যাপক পরিধি আসলে কেউ আর তৈরি করতে পারেনি।
এর প্রধান কারণ হতে পারে হাই ফাইভ কিংবা ফেসবুকের মতো সোস্যাল মাধ্যম। যদিও হাই ফাইভের প্রভাব বাংলাদেশে গড়ে উঠেনি কিন্তু ফেসবুক একটা ম্যাসিভ অ্যারিয়া বিস্তার করে ফেলেছে। আমি অমি রহমান পিয়ালকে চিনতে পারি ব্লগিংয়ের সূত্র ধরে। ২০০৮-০৯ সালে সিম্ফোনি নামের একটা লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতাম। এতে বেশ কিছু সমবয়সী তরুণ আমার সাথে যুক্ত ছিল। এরা প্রত্যেকেই ছিল তুখোড় ব্লগার। এরা কেবল ব্লগিংয়েই যে সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়, অফলাইনে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে এতোটা সক্রিয় ছিল যে, তা যে কারো জন্য বিস্ময়ের কারণ হবে।
আমি মনে করি, এই যে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, এটিকে আসলে সারা বাংলাদেশে সামাজিক আন্দোলন হিসাবে গড়ে তুলেছে সে সময়কার ব্লগাররাই। কি যুক্তিতে কি শরীরি ভাষায় এদের মধ্যে যে শক্তি আর সংকল্প দেখেছি সে এক অভাবনীয় ব্যাপার। তাই আমার ইচ্ছা ছিল এদেরকে আসলে কারা লিড দিচ্ছে সেটি খুঁজে বের করা। যদিও ওই অর্থে (রাজনৈতিক খেচরা নেতাদের মতো না) লিড না। বরং প্রশ্নে, তথ্যে, মতামতে অগ্রগণ্য হয়ে যারা প্রতিনিয়িত তথ্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন তাদের কথা বলছি। ওই তাদেরই একজন অমি রহমান পিয়াল।
তো বলতে গেলে, অমি রহমান পিয়ালকে আমি সোস্যাল এক্টিভিস্ট বলতেই পারি। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বলাও বাহুল্য নয়। জন্মযুদ্ধ ৭১ নামে একটি প্লাটফর্ম অমি রহমান পিয়ালের কারণেই সক্রিয় আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো অপপ্রচারের বিরুদ্ধে অমি রহমান পিয়াল এখন পর্যন্ত দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে আসছেন।
সে সময় অমি রহমান পিয়ালদের তারুণ্যের ঢেউই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে তরান্বিত করেছিল। যেটি শুরু করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। যদিও নানাভাবে মত অমত থাকতেই পারে। কিন্তু তারুণ্যে সেন্টিমেন্ট তো আর দূরে ঠেলে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করেনি করেনা।
প্রথম যেদিন শাহাবাগে অমি রহমান পিয়ালের সাথে আমার কথা হয়, আমি ভরকে গিয়েছিলাম। পোলাপান নিয়া চলাফেরা করে লোকটা। শুনছি মেশিন নিয়াও ঘুরে। শুনছি অনেকে তাকে গুন্ডাও বলে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নাকি ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিল। আসলে কী ছিল, সেইটা আমার জানাবার বিষয় না। আমার জানবার আগ্রহ, একজন মানুষ কেন দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে গিয়ে দেশ ছাড়তে হয়?
পাঠকদের জানিয়ে রাখছি, কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই প্রশ্ন করা হয়েছে অমি রহমান পিয়ালকে। একইসাথে কোনো রকম কর্তন পরিমার্জন কিংবা সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশ করা হয়েছে উত্তরগুলো।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: অমি রহমান পিয়াল তার সামাজিক বলয় এবং পরিচিতির বাইরে ব্যক্তি অমি রহমান পিয়াল মানুষটা কেমন?
অমি রহমান পিয়াল: একেকজনের কাছে একেকরকম। নির্ভর করে ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়ার উপর। তবে ফ্রেন্ডলি এটিচুড মেন্টেইন করে। তার সঙ্গে না মিশলে আসলে বোঝা যাবে না। তবে এককথায় আনলে ভালোর সঙ্গে সে খুবই ভালো, খারাপের সঙ্গে চরম খারাপ।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: বঙ্গবন্ধু, আওয়ামীলীগ আপনার রাজনৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করেছে। যদি দেখেন আপনার দল একটা ভুল করছে তাহলে আপনার কাছ থেকে সমালোচনা এবং তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত অবস্থান আশা করা যায় কি? যদি এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়ে থাকেন সেটি জানাবেন।
অমি রহমান পিয়াল: অবশ্যই আশা করা যায়। এই দলের প্রতি আমার নিবেদন আছে, সংগঠনের জন্য সময়-শ্রম-রক্ত-ঘাম দিয়েছি। তাই দাবীও আছে। যখনই দলের ভুল অবস্থান দেখি তখনই সেটার প্রতিবাদ করি। এমন ঘটনা নিকট অতীতেই অসংখ্যবার হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী কোন ব্যক্তি বা সম্পর্কিতদের দলীয় মনোনয়নের বিরুদ্ধে আমি বরাবরই সোচ্চার। একটি বিশেষ ঘটনা মনে পড়ছে, জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণ প্রচারের সময় ধর্মনিরপেক্ষতার অংশটি বাদ দেয়া হয়। এটা নিয়ে প্রথম প্রতিবাদ করি আমি ও মার্কিন প্রবাসী গবেষক জালাল ভাই। মুক্তিযুদ্ধে ভুটান না ভারত আগে স্বীকৃতি দিয়েছে এই বিষয়েও দলের বিপরীতে দলিলপত্রসহকারে আমার অবস্থান। হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতাও আমি মেনে নিইনি। আমার যাবতীয় লেখালেখিতে তা পরিষ্কার।
”এম্বেসিগুলাতে তখন বিপন্ন ব্লগারদের একটা তালিকা ছিলো। আমাদের সমস্যা আবেদন আকারে লিখে দিলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে আমার আজমের এবং রাজকন্যার হিউমেনিটরিয়ান ভিসা হলো।”
মেহেদী হাসান স্বাধীন: আপনি কেন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, নাকি আপনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে? একইসাথে জানতে চাই কাদের ভয়ে আপনি সপরিবার দেশ ছেড়েছেন?
অমি রহমান পিয়াল: কি হাস্যকর প্রশ্ন! আমি কি অপরাধী যে দেশ ছেড়ে পালাবো? পরিস্থিতির কারণে আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। ২০১৫ সালের আগস্টে আমার স্ত্রী সুইডেনে পড়াশোনা করতে যান। একমাত্র মেয়ে নিয়ে আমি একা। তখনও স্পাউস ভিসায় আমার সুইডেন যাওয়ার সুযোগ ও সুবিধা ছিলো। ব্যাপারটা মাথায় আসেনি কারণ আমার তখনও পাসপোর্টই ছিলো না। পরিকল্পিত প্রবাসবাসের সুযোগ আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেই পেয়েছি। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েও পরিবারের অমতে যাইনি। এরপরে অসংখ্য সুযোগ পেয়েছি। দেশ ছাড়ার কথা মনে হয়নি।
কিন্তু ৫০ বছর বয়সী একজন তখন দেশ ছাড়ে যখন সে চুড়ান্ত বিপন্ন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আমি বাসার পর বাসা বদলাচ্ছিলাম। কারণ ভাড়া নেয়ার দুদিন পরই নোটিশ আসে বাড়িওয়ালা থেকে। ৩ মাসে ৫টি বাসা আমি ছাড়তে বাধ্য হই। মেয়ে নিয়ে আমি মহাবিপদে। তার উপর সে স্কুলে পড়তে পারছিলো না। বন্ধুর স্কুল (ফয়জুর রহমান আইডিয়াল) ভর্তি করার পর বোমা হুমকি এলো। এখন আমার একটিভিজমের জন্য সে কেনো সাফার করবে! এরপর অক্টোবরের শেষের হামলা আরো কঠিন করে দিলো অবস্থা। ১ নভেম্বর প্রান্ত নামে এক ছোটভাই আমাকে এবং আজম খানকে (ব্লগার মহামান্য কহেন) নিয়ে গেলো তার বাসায়। সেখানে নিরাপদ থাকলেও অন্যান্য সমস্যা হতে থাকলো। টাকা এবং খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারগুলা কিছু ঘনিষ্ঠ ছোটভাই ম্যানেজ করে গেছে দিনের পর দিন। জানুয়ারীতে ওই বাসাতেও ঝামেলা বাধলো। আমরা একমাসের সময় নিলাম। আজম সিদ্ধান্ত নিলো দেশ ছাড়ার। এদিকে মেয়ে আমার শ্বশুড়বাড়ীতে থাকে, সেখানে বাবা-মার জন্য কান্নাকাটি করে। আমিও দেখতে যেতে পারি না। এমন পরিস্থতিতে ঠিক করলাম আমিও দেশ ছাড়বো। পাসপোর্ট করলাম আমার আর মেয়ের।

ইউরোপিয়ান এম্বেসিগুলো সব একই বিল্ডিংয়ে। ঠিক করলাম উপর থেকে শুরু করবো। সুইজারল্যান্ড এম্বেসিতে গিয়ে তাদের পলিটিকাল অফিসারের খোজ করলাম। তিনি পরিচয় শুনে চিনলেন। এম্বেসিগুলাতে তখন বিপন্ন ব্লগারদের একটা তালিকা ছিলো। আর আমার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অনেক সংবাদসংস্থায় নিউজ প্রকাশিত হয়েছে যেমন নিউইয়র্ক টাইমস, এপি এবং ভারতীয় কিছু পত্রিকায়।
আমাদের সমস্যা আবেদন আকারে লিখে দিলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে আমার আজমের এবং রাজকন্যার হিউমেনিটরিয়ান ভিসা এপ্রুভ হলো। ১০ ফেব্রুয়ারি আমরা দেশ ছাড়ি। তো এখানে একটা কথা বলি। যাপিত জীবনের একটা লম্বা সময় আমার কেটেছে যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীর আন্দোলনে। শীর্ষ অপরাধী বেশীরভাগ যখন ঝুললো, তখন মানসিক একটা প্রশান্তিও এলো আমার আর কিছু পাওয়ার নাই। আমি একা হলে কখনও জীবন নিয়ে ভাবতাম না। অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। পালাইনি। কিন্তু এবার আমার সঙ্গে আমার মেয়ের জীবনও জড়িত। তার নিরাপত্তা ও শিক্ষা নিশ্চিত করা বাবা হিসেবে আমার অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। তাই দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত। আমার কারণে ওর বিপন্নতা চাইনি। আমার পরিচিত যারা আছে, বন্ধু যারা আছে তারা জানে আমার মনোভাব কি, আমি পালানোর মানুষ কিনা। যাহোক। সুইজারল্যান্ড আসার পর আমার স্ত্রী সুইডেনের পড়াশোনা বাদ দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। সপরিবারে আমরা এখন এখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছি।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: বাংলা ব্লগ আন্দোলনের পথিকৃৎদের একজন অমি রহমান পিয়াল। বাংলাদেশ ব্লগ কালচারের শুরুর স্মৃতিময় কিছু কথা বোকার পাঠকদের জানাবেন।
অমি রহমান পিয়াল: পথিকৃৎদের একজন হিসেবে নিজেকে দাবী করবো না। তবে শুরুর দিকে ব্লগারদের একজন আমি। সত্যি বলতে লেখালেখি শুরু করার প্রথমেই সপ্তাহের সেরা ব্লগার হই। ফানি ব্যাপার হচ্ছে আমি আসলে ব্লগিং শুরু করি কবিতা লেখার মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু ঢোকার পর দেখলাম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেখানে যা তা লেখা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা সদম্ভে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করছে। কবিতা শিকেয় উঠলো। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে লেখা। এসব খাতে আমার চেয়ে বেশী কেউ লিখেছে বলে জানা নেই। এখন যেমন নিয়মিত ব্যান হই ফেসবুকে, তখন ব্লগেও বেশ ব্যান খেতাম। সামুতে আমার অরিজিনাল আইডি বাদে বাকিগুলা ব্যান হতো কদিন পরপরই। সেগুলা দিয়ে ছাগুদের খুব জ্বালাতাম। সবচেয়ে মজার ছিলো অশ্রু নামে একটা আইডি। যে ছাগুচীফ ত্রিভুজকে প্রেম নিবেদন করতো কবিতার মাধ্যমে। লজ্জায় অপমানে ত্রিভুজ অনেকদিন ব্লগে ঢোকেনি। পরে কিভাবে যেন ফাঁস হয়ে যায় এটা আমি। আর ছিলো এটিমের হয়ে ছাগুদের সঙ্গে লড়াই। রাতদিন খেয়ে না খেয়ে যুদ্ধ। ওহ, কিসব দিন ছিলো!

মেহেদী হাসান স্বাধীন: প্রায়ই আমরা শুনে থাকি বাংলাদেশের আইসিটি খাতটা জামাত শিবির এবং এদের আতাতকারীদের হাতে জিম্মি, এটা আসলে কতোটা সত্য? যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে বাস্তবতাটা আসলে কী?
অমি রহমান পিয়াল: বাস্তবতা হচ্ছে আইটি খাতে জামাতিরা শুরু থেকেই সক্রিয়। তারা এই খাতে বিনিয়োগ করেছে, লোকজনকে পড়াশোনা করিয়েছে। তাই শুরুর দিকের আইটি এক্সপার্টরা প্রায় সবই জামাতিমনোভাব সম্পন্ন। প্রো সেভেন্টিওয়ান বলতে গেলে নেইই। এরাই সময়ে আরো উচুতে চলে গেলো। সরকারও বাধ্য হলো এদেরকেই আমলে নিতে। তবে পরিস্থিতি এখন বদলাচ্ছে।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: অমি রহমান পিয়াল মেশিন নিয়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুরতো। গুন্ডা হিসাবে একটা পরিচিতি আছে। কথা বলার সময় কোনো বাছবিচার নাই, কয়া দিলাম টাইপের। এই বক্তব্যের সাথে আপনি কতোটা একমত? একমত হলে এবং না হলে আপনার ব্যাখ্যা কী?
অমি রহমান পিয়াল: হাহাহা হাহাহা। নারে ভাই পলিটিকাল ক্যাডার আর গুন্ডায় তফাৎ আছে। রাজনৈতিক কারণ ছাড়া মেশিন কোমরে গোজা হয়নি। তবে শাহবাগ শুরু হওয়ার পর নিরাপত্তার কারণে কয়েকবার রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমার কথাবার্তা একটু চাছাছোলাই বটে। যা বলি সরাসরি বলি, ভনিতা ছাড়া। এটা হয়তো আমার সমস্যা। তবে ব্যাডঅ্যাস ভাবমূর্তি একেবারে খারাপও না। যারা নাম ভাড়িয়ে গালাগালি করে কিংবা অপবাদ রটায় তারাও জানে সামনে এসে এসব বললে কি সমস্যা হবে!

মেহেদী হাসান স্বাধীন: অমি রহমান পিয়াল কি আওয়ামীলীগের মধ্যে মিশে থাকা হাইব্রিড দালালদের মাধ্যমে আক্রান্ত নন? যদি না হয়ে থাকেন তাহলে হাইব্রিড আওয়ামীলীগার কারা?
অমি রহমনা পিয়াল: তাতো হই। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে হাইব্রিডরাও আমাকে নাস্তিক বলে গালি দেয়। হাইব্রীড হচ্ছে তারাই যারা সরকার পতন হলে নগদে মুখোশ খুলে নারায়ে তকবির শ্লোগান দিবে।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্রলীগের অনেকগুলো বিষয় চোখে পড়বার মতো। যেমন নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্ররা যখন আন্দোলন করছে তখন ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী সক্রিয় হয়। এবং সে সময় একজন ফটো সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করা হয়। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
অমি রহমান পিয়াল: যেভাবে এবং যেসব গুজব ছড়িয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মানুষকে প্ররোচিত করা হচ্ছিলো তাতে হেলমেট তো পরতেই হবে। বড়দের খেলা খেলতে নামলে মাথা বাঁচানো জরুরী। ছাত্রলীগ চোখ তুলে নিচ্ছে, ছাত্রলীগ রেপ করছে, ধানমন্ডী অফিসে অনেক মেয়েকে আটকে রেখেছে, সেখান থেকে শুধু এম্বুলেন্স বেরুচ্ছে- এই টাইপের কথাবার্তা তো কম শোনেননি সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছাত্রছাত্রীরা তো এতিম না কেউ। তো কারো বাবা-মাকে কিংবা অভিভাবককে বলতে শুনেছেন তার সন্তানকে খুন করা হয়েছে বা সে রেইপড হয়েছে? এসব বলে এসব প্ররোচনার আড়ালে ছাত্রলীগের উপর হামলা করেছে সাম্প্রদায়িক শক্তি, তাদের রুখতে ছাত্রলীগ তাই করেছে যা ওই সময়ে প্রয়োজন ছিলো। আর ফটোসাংবাদিক ঠিক কাদের মার খেয়েছেন জানি না। সাইন্সল্যাবের মোড়ে ঢাকা কলেজের ছাত্রদল নেতারাও হেলমেট পরে হামলা করেছে। ইটপাটকেলের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর এই হেলমেট। ছাত্রছাত্রীদের নায্য আন্দোলনকে যখন কোনো অপশক্তি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করে এবং টার্গেট হয় ছাত্রলীগ, তখন প্রতিরোধ না করে মার খাবে?
”যেভাবে এবং যেসব গুজব ছড়িয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মানুষকে প্ররোচিত করা হচ্ছিলো তাতে হেলমেট তো পরতেই হবে। বড়দের খেলা খেলতে নামলে মাথা বাঁচানো জরুরী।”
মেহেদী হাসান স্বাধীন: যে কোনো সিদ্ধান্তে সকল নেতা শেখ হাসিনার উপর তাকিয়ে থাকছে। কিংবা দেখা যাচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে কথা বললেও ভুলভাল বলছে। পরে সেসব বিষয় এক হাতেই সমাধান করছেন শেখ হাসিনা। তাহলে আওয়ামীলীগ কি নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে?
অমি রহমান পিয়াল: না, নেতৃত্ব সংকট বলবো না। রাজনৈতিক চর্চার ভুল দর্শনে আছে। একটা সময় সাহসী রাজনৈতিক নেতাদের প্রাচুর্য্য ছিলো আওয়ামী লীগে। তাই রাস্তায় নামতে হাইকমান্ডের নির্দেশনা সবসময় জরুরী ছিলো না। কিন্তু এখন যখন তেলবাজিকে নেতা হওয়ার জন্য আদর্শ মানা হয়, তখন তেলবাজরা সংশয়ে থাকে হাইকমান্ডের নির্দেশের বাইরে কিছু করা উচিত হবে কিনা! সম্প্রতি দূর্গাপুজায় সাম্প্রদায়িক হামলার সময় এই ব্যাপারটা প্রকট হয়ে চোখে পড়েছে।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: আওয়ামী সরকার কি গণতান্ত্রিক সরকার? হলে সেটি কীভাবে?
অমি রহমান পিয়াল: যেই দল দীর্ঘ কয়েক দশক গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াই করে ক্ষমতায় গেছে সে তো সামরিক সরকার হতে পারে না। বাংলাদেশের সবগুলো দলের আমলনামা দেখে বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন দলটা গণতান্ত্রিক? বিএনপি-জাতীয়পার্টি দুটোরই জন্ম সেনানিবাস থেকে। দীর্ঘসময় স্বৈরাচারী শাসনে অভ্যস্ত ছিলো তারা। বাকি থাকে কমিউনিস্ট দলগুলো আর ইসলামী দলগুলো। কাদের মেনিফেস্টোতে গণতন্ত্র আছে? কমিউনিস্ট শাসিত কিংবা ইসলামী শাসনে থাকা কোন দেশে গণতন্ত্র আছে? এই অগণতান্ত্রিক দলগুলোকে সারাজীবন একাই সামলাতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। একটা সহজ সমীকরণ বলি। বাংলাদেশের রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগ আর এন্টি আওয়ামী লীগ- এই দুই ভাগে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবাই একজোট সবসময়।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়ন কাণ্ডের বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না, তবুও কোথায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ? যার কারণে মুক্ত বুদ্ধি চিন্তাশীলদের দেশ ছাড়তে হচ্ছে?
অমি রহমান পিয়াল: কাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মেধার উন্নয়নতো হচ্ছে না। মানসিক উন্নয়ন তো হচ্ছে না। দেশের সাংস্কৃতিকমন্ডল বিপন্ন হয়ে পড়েছে ধর্মের কাছে। ওয়াজের জোয়ার চারপাশে। সুলতান সুলেমান দেখে আলহামদুলিল্লাহ মাশাল্লাহ ছাড়া কথা নেই। বিজ্ঞাপনেও চাপ দাড়ি আর হিজাব। আজকে দেখলাম ছাত্র ইউনিয়নের এক পাঠচক্রে বোরকায় ঢাকা মেয়েরা! সানাইও তওবা করে হিজাব ধরেছে। মাহিয়া মাহিও হ্বজে গেলো। সবার চিন্তা ভাবনা ও তার প্রকাশে কুপমন্ডুকতা প্রবল। সব পাপী বুঝে গেছে হাওয়া এখন ধর্মের কলে, পশ্চাদপদতায়। ভন্ডামী তাই বেড়ে গেছে। এই কারণেই বাংলাদেশ আসলে পিছিয়ে পড়ছে। এই কারণেই মুক্ত বুদ্ধি চিন্তাশীলরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে। তাদের ধরে রাখার তাদের নিরাপদ পরিবেশ দেয়ার কোনো উদ্যোগও নেই সরকারী তরফে।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: একজন অমি রহমান পিয়াল কেমন বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছেন? তার চাওয়ায় কি কোনো আক্ষেপ রয়ে গেছে?
অমি রহমান পিয়াল: একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছি বরাবর। চেয়েছি বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জনগন যারা নিজের পতাকাকে সম্মাণ করবে, ভাতৃত্ববোধে পরষ্পর কাধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবে। আমি আশাবাদী মানুষ। একদিন নিশ্চয়ই হবে এমনটাই।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: মিস করছেন, নিজের দেশকে? নিজের মানুষকে? কী করেন যখন নিজের মাটির কথা শেকড়ের কথা মনে পড়ে? অমি রহমান পিয়াল: যোগাযোগমাধ্যমের এই স্বর্ণযুগে মানুষকে আসলে মিস করার সুযোগ কই? ফোনে, চ্যাটে, ভিডিও বার্তায় সবসময়ই কারো না কারো সঙ্গে কথা হচ্ছে। হ্যা দেশের মাটি মিস করি। কিছু খাবারদাবার খুব মিস করি। মেহেদী হাসান স্বাধীন: কী করে কাটছে আপনার প্রবাস জীবন? অমি রহমান পিয়াল: দুবছর কেটে গেছে বৈধ অনুমতি পেতে। তারপর দুবছর ভাষা শিক্ষা। একটা কোর্স করছি। মাঝে করোনার তীব্রতায় সেটা আটকে ছিলো, আবার শুরু করেছি। মেহেদী হাসান স্বাধীন: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কাছ থেকে আপনার চাওয়াটা কী? অমি রহমান পিয়াল: বঙ্গবন্ধুর চার মূলনীতিতে দেশ চালানো। ধর্মনিরপেক্ষতা প্রশ্নে ৭২ সালের মূল সংবিধানে ফেরত যাওয়া। এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবে মনোনিবেশ করা। মেহেদী হাসান স্বাধীন: কী ধরনের তারুণ্য দেখতে চান এখনকার তরুণ ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে? অমি রহমান পিয়াল: অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমিক। |
মেহেদী হাসান স্বাধীন: আসলে আমাদের মূল সমস্যাটা কোথায়- যে কারণে এখনো দেশবিরোধী দালালরা সক্রিয়?
অমি রহমান পিয়াল: আমাদের মূল সমস্যা নিজের শক্তি অনুধাবনে। আমরা সবকিছুতে পরনির্ভর। আমাদের স্বাধীনতাটাও এখনও ভারত-পাকিস্তান সমর্থকদের তর্কাতর্কিতে বন্দী। সাড়ে নয়মাস এত রক্ত, মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই সব কিছুই তুচ্ছ এই অপশক্তির কাছে। সব দেশেই বিপ্লবের পর একটা রক্তারক্তি হয়। নিঃশেষ করা হয় দেশবিরোধীদের। বাংলাদেশ সেটা পারেনি, উল্টা স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় মুক্তিযোদ্ধারাই বিপন্ন হয়ে গেছে।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: মুরুব্বি বার্তা কেন প্রকাশ করেন? এইটা কী এক ধরনের ভয় দেখানো নয়?
অমি রহমান পিয়াল: মুরুব্বি বার্তা আমার লেখা নয়। খালিদ জামান সাহেব বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর শীর্ষ আর্কিটেক্টদের একজন, বুয়েট এবং ইউএস থেকে পাশ করা। উনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে উনি আমাকে ম্যাসেজ দিতেন। একবার একটা ম্যাসেজ আমি মুরুব্বি বার্তা নামে পোস্ট করি। বিষয়টা ওনার পছন্দ হয়। তারপর নিয়মিত লিখতেন। অনেকদিন ধরেই উনি অসুস্থ্য। আর লিখেন না। তবে হাই হ্যালো হয়। মুরুব্বি বার্তা ভয় দেখানো হবে কেনো বুঝলাম না।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: আবার কি দেশে ফিরবেন? ফিরলে কেন ফিরবেন?
অমি রহমান পিয়াল: ইচ্ছাতো প্রবল। ইলিশের ডিম দিয়ে গরম ভাত, মাংসের চাপ, কাচ্চি, ফুচকা, পোড়াবাড়ীর চমচম খেতে ফিরবো। যদিও বিদেশে সবই পাওয়া যায়। দেশের টেস্টটা পাই না।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: আসলে দেশপ্রেমটা কী? দেশপ্রেম কী দলমত উর্ধ্বে হতে পারে? হলে আপনি কেন আওয়ামীলীগকে ছাপিয়ে দেশপ্রেমিক হতে পারছেন না?

অমি রহমান পিয়াল: দেশপ্রেম হচ্ছে কোনো ব্যক্তি যখন ভালো কাজ করবে, আইন মেনে চলবে, মানুষকে সাহায্য করবে, চুরি করবে না, অপরাধ করবে না। এই ভালোটুকু যখন ব্যাপ্তি পায় এবং সামাজিক ও নাগরিক চর্চায় রূপ নেয় তখন একটা দেশ সমৃদ্ধ হয় সব দিক থেকেই। মোটা দাগে দেশপ্রেম বলতে আমি বুঝি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি অনুগত থেকে দেশের সম্মাণ বাড়াতে কাজ করা। আমার কোনো কাজে যদি যদি দেশের নাম হয় তখন সেটাই হওয়া উচিত লক্ষ্য। দেশপ্রেম অবশ্যই দলমতের উর্ধে হতে পারে। এই বিদেশে আমি যদি খারাপ কিছু করি সবাই বলবে বাংলাদেশীরা খারাপ, ভালো করলে প্রশংসিত হবে বাংলাদেশ। এই যে নিজের দেশকে অন্যের চোখে অপমানিত হতে না দেওয়া এবং প্রশংসিত করার চেষ্টাই আমার কাছে দেশপ্রেম।
আপনি এটা নিজস্ব মত দিলেন কিংবা আরোপ। আমার দেশ প্রেমে আওয়ামী লীগ সাংঘর্ষিক না, ছিলো না কখনও। আমার লেখালেখিতে বাই ডিফল্ট মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি উপকৃত হয়, সুবাদেই আমার বক্তব্য আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়। কিন্তু মাথা বিক্রি করে রাজনীতি করিনি কখনও।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: অমি রহমান পিয়াল এখন কেমন আছেন?
অমি রহমান পিয়াল: এই মহামারীতে এখনও সুস্থ্য। শারীরিক এবং মানসিকভাবে।
মেহেদী হাসান স্বাধীন: বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকা উচিত। তাই আপনাকে একটা বাড়তি প্রশ্ন করছি। এখনো পথে শিশুরা ডান্ডি খেয়ে ঘুরছে, তাও রাজধানীতে, নগরমুখী মানুষের ভীড়, সবাই টাকার পিছনে ছুটছে। মানুষ যেমন মানুষের দিকে চাইছে না, বড়রাও তার পাশের ছোট-ছোট মানুষগুলোর দিকে চাইছে না। যেন রাষ্ট্রটাই আসলে মানুষের দিকে চাইছে না! এই বক্তব্যের বিপরীতে বিজয়ের এই সুবর্ণ জয়ন্তীতে আপনার অভিমত কী? কেমন সুবর্ণ জয়ন্তীর পালনের অপেক্ষা করেছিলেন, আর কেমন পেলেন?
অমি রহমান পিয়াল: উন্নত জীবনযাত্রার চেষ্টা এবং ব্যর্থতার হতাশা সবখানেই আছে। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধগুলো যে হারে বদলে যাচ্ছে তাতে নাগরিক মূল্যবোধের অবস্থাও তথৈবচ। বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে এখনও মনে হয় আমরা বুঝি জিতেও হেরে গেছি। এই উদাসীনতা রাষ্ট্রের তরফে বলেই স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির এখন বাড়বাড়ন্ত। মুক্তিযুদ্ধের যে নীতিগুলা তার কোনো প্রয়োগ নেই, চর্চা নেই। মনোভাবে পাকিস্তানীই রয়ে গেলে আর বাংলাদেশ হয়ে লাভটা কি হলো!
আমি চেয়েছি তারুণ্য তাদের পূর্বসূরীদের অর্জন নিয়ে গর্বিত হোক। তাদের আত্মত্যাগ ও লড়াইকে সম্মাণ করুক। যে উদ্দেশ্যে তাদের বলিদান সেটা ধারণ করুক।
সেটা তাদের অনেকে করছেও। তারপরও তাদের ছাপিয়ে আজ পরাজিত শক্তির উত্তরসূরীদের উল্লাসই কানে বাজে। এই ব্যাপারটা আমরা বলে কয়ে ঠিক করতে পারবো না। তরুণ সমাজকে উদ্যোগী হয়েই ঝামেলাটা শেষ করতে হবে।
পাঠক, শেষ হলো অমি রহমান পিয়ালের সাথে কথোপকথন। কথা শেষে একটা বিষয় স্পষ্ট- আসলে আমরা আমাদের বাংলা দেশটাকে ভালোবাসি। এরচে বড় কিছু তো নাই। একটা মানুষ তার সন্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়েছেন নিজের মা, মাটি ছেড়ে দূরের এক অচীন দেশে থাকতে। যারা বাধ্য করেছেন, তাদের আসলে কোনো দেশ নাই। তারা পুরো মানব সম্প্রদায়ের জন্যই বিপজ্জনক। নিশ্চয় বোকা সম্প্রদায় এই বিপজ্জনক পশুর পাশবিকতা থেকে নিরাপদ থাকবে। ধন্যবাদ।
পুনঃশ্চ: পাঠক বোকার কাজ অতিরঞ্জন! তাই যদি কোথাও অতিরঞ্জন মনে হয় সেটা একান্তই মেহেদী হাসান এবং অমি রহমান পিয়ালের নিজস্ব অভিব্যক্তি। এখানে অন্য কোনো কিছুকে টেনে সাইটটাকে ডাউন করবার অযথা হয়রাণি না করবার অনুরোধ থাকলো। -বোকা সম্পাদক
Pingback: শ্মশান ঠাকুর- কাঠামোতে কলোনিয়ান পোঁকা - বোকা
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা বাংলাদেশের যখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তখন আমি স্কুল পড়বো একজন ছাত্র। ব্লগার জিনিসটি বারবার কানে বাজে। কিন্তু আসলে ব্লগার জিনিসটা কি বা কারা তা বুঝে উঠতে পারেনি। কারণ গ্রাম পর্যায়ে তখনও সেভাবে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি। সময়ের বিবর্তনে আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছি ব্লগার কার আবার কি। আমি রহমান পিয়াল ভাইয়ের কাছে একজন বাঙ্গালী নাগরিক হিসেবে আমি কৃতজ্ঞ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছিল তাদের বিচারের দাবিতে আমি রহমান পিয়াল ভাইয়েরা যে ভূমিকা পালন করেছে তাই ইতিহাসের পাতায় চির ভাস্কর হয়ে থাকবে। দেশ নিয়ে তারুণ্য নিয়ে আমি রহমান পিয়াল ভাইয়ের যে ভাবনা, তাই যেন হয় আগামীর বাংলাদেশ।
ছাত্রলীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে, অমি ভাইসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নেতৃত্ব দানের ইতিহাস বরাবরই আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সোহাগ- নাজমুল ভাইয়ের কমিটির পর যে সকল কমিটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ উপহার পেয়েছে, এগুলো শুধু কাগজে-কলমেই কমিটি ছিল। যদিও আমার নামের উপরে বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক দুই ভাইয়ের স্বাক্ষর করেছে, তবুও আমার কাছে তাদেরকে ছাত্রলীগের মতো সংগঠনকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতা সম্পন্ন মনে হয়নি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আজকের এই করুণ পরিণতি বিগত কয়েক বছরের ব্যর্থ নেতৃত্বের ফসল। আমরা চাই অমি রহমান পিয়াল ভাইদের মত যোগ্য কোন এক সাংগঠনিক ব্যক্তি, সে হোক ক্যাডার, সে হোক ভয়ংকর, সে হোক সুশীলদের চোখে অপরাধী। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। অন্ততপক্ষে ছাত্রলীগের অতিথি ইতিহাস বিতর্কিত হবে না ।
ছাত্রলীগ শুধু সাংগঠনিকভাবেই দুর্বল হয়নি। মানসিকভাবে ও ছাত্রলীগকে দুর্বল করা হয়েছে। বিশেষ করে দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অবহেলা অবজ্ঞা সরকারি চাকরিতে স্থান না দেওয়া দলীয় সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া, গ্রুপের রাজনীতির মাধ্যমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে হামলা মামলা স্বীকার করার মাধ্যমে ছাত্রলীগকে গণমানুষের কাছে যেমন হাসির পাত্র করেছে, তেমনি নতুনদের আগমনের বিষয়টিকে মানসিকভাবে দুর্বল করেছে। আমরা জি স্যার হ্যাঁ স্যার মার্কা নেতৃত্ব আর চাই না। আমি রহমান পিয়াল ভাইদের মত মানুষেরা ছাত্রলীগ থাকা অবস্থায় যেভাবে গর্জে উঠেছিল ঠিক দলেরই করুণ দুঃসময় একইভাবে আমি রহমান পিয়াল ভাই সুশান্ত দাস গুপ্ত দাদা এবং আইজুদ্দিন ভাই সহ যারা আজকে এই দিনে আমাদেরকে সাহস জোগাচ্ছে তাদের মত নেতৃত্ব চাই।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বাধীনতার সংগ্রামের গৌরবের ইতিহাস রক্ষার্থে, রাজাকার ও তাদের দর্শকদের কাছ থেকে লাল সবুজের পতাকাকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আবারো রাজপথে নামতে হবে। পিয়াল ভাই আমাদের কাছে একটি অনুকরণীয় নেতার নাম হয়ে থাকবে।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে, রাজাকারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তুলতে হলে অমি রহমান পিয়াল ভাইদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দরকার হবে।
জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু।