শাহীন ওমরের কবিতা

শাহীন ওমর পেশায় একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা। বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা শাখায় কাজ করছেন। শাসকের পাশে থেকে কবিতার চর্চাটা সহজ কি? প্রশাসকের নৈতিক স্খলনের পাশ কেটে কী করে কবিতা লেখে ওমর? কী কবিতাই বা লেখে ওমর? ওমরকে বললাম আপনার কবিতা দেন; বো-কাপা-ঠক আপনার কবিতা পড়তে আগ্রহী।

পুলিশ পরিচয় থেকে বেরিয়ে শাহীন ওমর তার কবিতা দিলো। প্রিয় বো-কাপা-ঠক, তৈলাক্ত বাঁশের নীতিটা তাই আগে জেনে নিই-

তৈলাক্ত বাঁশনীতি
—–শাহীন ওমর

তৈলাক্ত বাঁশে
বানরের উঠানামা চলছে
একলাফে বাড়ছে
পর ধাপে কমছে বলছে।

বাড়া কমার সূত্রে
মূল্যটা বাড়ছেই
তৈলাক্ত বাঁশনীতিতে
জনগণ নাচছেই।

শাহীন ওমর

কবি শাহীন ওমর

জনগণ যে নাচছে ওমর সেসব ভালো জানে। আমরা বো-কাপা-ঠকরাও জানি। তাই ওমরের লেখা বোকার আগ্রহ বাড়ায়। সারাদিন মানুষ নিয়ে কারবার আবার সেই মানুষ নিয়েই কবিতাগ্রহ। কিন্তু কবির কি কোনো কবিগৃহ থাকে? যেখানে চুপ করে বসে থাকা যায়? ইচ্ছামতো ভাবমারা যায়? কিংবা যা খুশি তা লিখে ফেলবার অবসর কাটানো যায়? নাকি চারপাশটাই ওমরের কবিগৃহ?

গোটাবায়া
—–শাহীন ওমর

গোটাবায়া
দেশটা খাইয়া
পালাইছে।
এখন নাকি
হয়ে যাবে
মালয় সে?

আরও কত
দেশে দেশে
ফূর্তি করে
উর্দি ভরে
সর্দি জ্বরে
মনের গোলা
পূর্ণ করে
কতক রাজা।

সে খবরটা
কেউ রাখেনা
দিকে দিকে
হাত ঝাকিয়ে
মিশিয়ে দিলেই
বারোভাজা।

গোটাবায়া
গিলে খায়
আলো ছায়া
মানব মায়া
নিজের কায়া
হয় বেহায়া।

তাকে এখন
বলে বিশ্বলোক
গোটাবায়া!
তুমি তো
বিশ্ব বেহায়া
তুমি তো
বিশ্ব বেহায়া!

জলের কোলাহল
—–শাহীন ওমর

উজানের উজানিতে
ভাইস্যা পরাণ যায়।
সর্বনাশা ঢল নেমেছে
হায় হায় হায়, হায়!!!!

চারিদিকে চলছে শুধু
জলের কোলাহল।
বসতবাড়ি, ভিটেমাটি
সব হয়েছে তল।

উজানের জলদরজায়
কপাট বন্ধ হলে,
ধূসর বুকে চিলিকপাড়ে
মরুর কথা বলে।

আষাঢ়ে জলে ডোবাও
চৈত্রে তুমি খল,
পরাধীন মানসিকতায়
ডুবছি পলে পল।

তিস্তা মরে জল পিপাসায়
এখন নামে ঢল।
নে শুষে নে বুকটা জুড়ে
জলের কোলাহল।

বলছে যেন জাতির বিবেক
নাড়বে কবে কল?
হিস্যামতই পেতে হবে
শীত-গ্রীষ্মের জল।

অবশেষে হচ্চে চীনের
জল ফোয়ারা
জলকে নিয়ে নাচানাচি
আনবে যুদ্ধ জোয়ারা।

সবারই তো চাই গো
সারা বান তুহুরা
জল নিয়ে খেলা ছাড়
ছাড় সব কুহুরা।

জীবনের সান্নিধ্য পেতে চায় কবি। পেতে চায় জীবনের স্বাদ। তাগিদ যাই থুকক জীবন কবিতায় ভরে থাকুক। চুপ মেরে থাকা ওমর সবাক তার কালি ও কলমে। সময়ের যতোটাই বেঁকে যাক না কেন ওমর ওই রেললাইনের মতো সরল পথ ধরে চলতে থাকে। কী এক ভালোবাসায়; সে কি কবিতা?

বেঁকে যায় সময়ের চোয়াল
—–শাহীন ওমর

একটা নিকষকালো অন্ধকার ছুটে চলছে
আর তার প্রভাবে বেঁকে যায় ইথার,
বেঁকে যায় প্রসঙ্গ,প্রশ্ন ও উত্তর…
বেঁকে যায় সময়ের চোয়াল।
ফেরেলের সূত্রের মতই সময় ছুটছে
বায়ুপ্রবাহের উচ্চচাপ আর নিম্নচাপের গোয়ালে
মুখ তোলে না কলুরবলদ বাঁধা যুৎসই জোয়ালে।

কবিতা একটা স্পর্ধা। কবি সেই স্পর্ধার গাছ। সেই গাছে দম থাকে- অক্সিজেন। সেই দমে বাঁচে মানুষ ভালোবেসে। কবিতা সেই ভালোবাসার পাতাটাতা গাছটায় ঝুলে থাকে। ভালোবাসতে থাকে সম্মোহনে। যেন পুরো জগৎটায় মায়ের আঁচল। সেই আঁচল তলে একটা বেড়াল ল্যাজটা নাড়ায়। রাজনীতি- সে এক উদ্ভট উপহাস।

দেশটা সবার মা
—–শাহীন ওমর

ল্যাজটা কাটো রাজনীতির
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
ল্যাজটা কাটো রাজনীতির
পুঁজিবাদী খানের।

ল্যাজটা কাটো রাজনীতির
লালফিতার ঐ আমলার
ল্যাজটা কাটো রাজনীতির
হাভাতেরও গামলার।

ল্যাজটা কাটো রাজনীতির
অফিস আদালতের
ল্যাজটা কাটো রাজনীতির
যত সেবা খাতের।

ল্যাজটা কাটো রাজনীতির
দ্বিখণ্ডিত মতের
ল্যাজটা কাটো রাজনীতির
বাপ ভাতারের পথের।ল্যাজ কাটিয়া মূলধারাতে
পড়ুক সবার পা
দেশকে সবাই ভালোবাসি
দেশটা সবার মা।

ওমর তার মতোই লিখে চলেছে। কবি ওমরের জন্য বোকা’র নিরন্তর শুভকামনা। এর আগে কবি ওমরের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ নাথুরায় হাঁকে, নির্বাক টিরেসিয়াস এবং বৃন্তচ্যুতির কোরাস।
বোকা অপেক্ষায় থাকবে কবি ওমরের পরবর্তী বইটির জন্য...
শাহীন ওমর
নির্বাক টিরেসিয়াস
শাহীন ওমর

2 thoughts on “শাহীন ওমরের কবিতা”

  1. মনজুর মুকাদ্দাস

    ভালো লাগলো, কবি ও কবিতার জন্য শুভকামনা রইল।

  2. শাহীন ওমর

    কবিতা নিয়ে বোকার এ আয়োজন একটি সৃজনশীল তৎপরতা। এ তৎপরতা অব্যাহত থাকুক। বোকার পাঠক সমৃদ্ধি ঘটুক। বোকা বিডি ডটকম পরিবারের সাফল্য কামনা করছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top